কাজী জমিরুল ইসলাম মমতাজ :: সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার পিছিয়ে পড়া শিক্ষাকার্যক্রম আরো একধাপ এগিয়ে নিতে অবশেষে স্থাপন হচ্ছে বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল। আনুষ্ঠানিক ভাবে স্কুলের নামে প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের ৭৫ শতাংশ জায়গা দান করলেন, উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের আস্তমা গ্রামের ডাক্তার দম্পতি ড. আবু সাঈদ আলী আহমদ ও ডা. সুলতানা ওয়াহিদ চৌধুরী। ডাক্তার দম্পতি স্কুলের নামে এতো মূল্যমান জায়গা দান করায় এলাকাবাসী আনন্দিত ও উল্লাসিত। বুধবার সকাল ১১টায় সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে আনুষ্ঠানিক ভাবে শান্তিগঞ্জ উপজেলার আস্তমা গ্রামের প্রধান সড়কের পশ্চিম পাশে সিলেট-সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের উত্তর পাশ ঘেঁষে পঁঞ্চাশ হাল মৌঁজায় ৭৫ শতাংশ জায়গা স্কুলের নামে হস্থান্তর করেন, কানাডা প্রবাসী আস্তমা গ্রামের ডাক্তার দম্পতি ডা. আবু সাঈদ আলী আহমদ ও ডা. সুলতানা ওয়াহিদ চৌধুরী। স্কুলের পক্ষে জায়গাটি গ্রহণ করেন, শান্তিগঞ্জ উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা সুকান্ত সাহা। ভুমি হস্থান্ত অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফজলে রাব্বানী চৌধুরী, উপজেলা প্রকৌশলী আল-নুর তারেক, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর হোসেন, একাডেমিক সুপারভাইজার নুরে আলম সিদ্দিকী, শান্তিগঞ্জ প্রেস ক্লাবের সভাপতি কাজী মোহাম্মদ জমিরুল ইসলাম মমতাজ, সাধারণ সম্পাদক ও ভূমিদাতা ডা. আবু সাঈদ আলী আহমদ’র ভাতিজা সোহেল তালুকদার, অর্থ সম্পাদক ইয়াকুব শাহরিয়ার, উপজেলা নির্বাহী অফিসের নাজির আবু বক্কর সিদ্দিকী, আস্তমা গ্রামের সমাজসেবী ভূমি দাতা ডা. আবু সাঈদ আলী আহমদ’র ভাতিজা হাসান মাহমুদ তারেক, আঙ্গুর মিয়া, নজরুল ইসলাম, আস্তমা গ্রামের গ্রীস প্রবাসী তোফায়েল আহমেদ সহ প্রমূখ। এর পরে সরেজমিনে গিয়ে জায়গা পরিদর্শ করেন দাতা পরিবার ও প্রশাসনের কর্মকর্তারা। পরে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুকান্ত সাহা ভূমিদাতা ডা. আবু সাঈদ আলী আহমদ ও উনার সহধর্মিণী ডা. সুলতানা ওয়াহিদ চৌধুরীকে ক্রেস্ট প্রধান করেন।
জানা জায়, শান্তিগঞ্জ উপজেলার প্রতিষ্ঠার র্দীঘ ১৮ বছর পেরিয়ে গেলেও উপজেলায় নির্মাণ হয়নি মাধ্যকি পর্যায়ে তেমন কোন ভাল স্কুল। দুটি পুরাতন স্কুলকে বিগত সরকার আমলের শেষেরদিকে সরকারি করণ করণেও সতন্ত্র ভাবে উপজেলা পর্যায়ে ভালো মানের কোন স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হয়নি। তাই দিনে দিনে শিক্ষাক্রম ব্যাহত হচ্ছিল। জেলার মধ্যে প্রতি বছরও রেজাল্টে সর্ব নিম্ন স্থান এ উপজেলার। এবার গুছতে শুরু করেছে এলাকার মানুষদের স্কুল না থাকার দুঃখ। আস্তমা, কামরূপদলং, আসামপুর, সদরপুর, পার্বতীপুর, তালুকগাঁও, কামরূপদলং কান্দিগাঁও, সুলতানপুর এলাকা নিয়ে গঠিত নাইন্দার পাড়ের আকাংখার স্কুল স্থাপনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এখানে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল। মাধ্যমিক পর্যায়ের এ স্কুলটি প্রতিষ্ঠার মূল কারিগরেরা হচ্ছেন ভূমি দাতা ডাক্তার দম্পতি ও শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুকান্ত সাহা। তাঁদের যৌথ প্রচেষ্টায় শান্তিগঞ্জ উপজেলার আস্তমা গ্রামের প্রধান সড়কের পশ্চিম পাশে সিলেট—সুনামগঞ্জ আঞ্চলিক মহাসড়কের উত্তর পাশ ঘেঁষে পঁঞ্চাশ হাল মৌঁজায় প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে স্কুলটি। স্কুল প্রতিষ্ঠায় প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্যের মূল্যবান ভূমি দান করছেন আস্তমা গ্রামের বাসিন্দা, কানাডা প্রবাসী সমাজসেবক ডা. আবু সাঈদ আলী আহমদ ও তাঁর সহধর্মিণী ডা. সুলতানা ওয়াহিদ চৌধুরী। বুধবার সকালে শান্তিগঞ্জ রেজিস্ট্রি অফিসে ইউএনও সুকান্ত সাহার উপস্থিতিতে স্কুলের নামে আনুষ্ঠানিকভাবে ভূমি দান করেনএই ডাক্তার দম্পতি। স্কুলের পক্ষে মূল্যবান সম্পত্তি গ্রহণ করবেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুকান্ত সাহা।
প্রশাসনিক সূত্রে জানা যায়, আগামী জানুয়ারি থেকেই শিক্ষার্থী ভর্তি নেওয়া হবে এই প্রতিষ্ঠানে। ২০২৫ শিক্ষাবর্ষে নিকটস্থ অস্থায়ী ভবনে ৬ষ্ঠ থেকে ৮ম শ্রেণিতে চলবে শ্রেণি কার্যক্রম। ফেব্রুয়ারির দিকে নতুন ভবন নির্মাণ করবে উপজেলা প্রশাসন। প্রাথমিকভাবে প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন উপজেলা সহকারি কমিশনার (ভূমি) ফজলে রাব্বানী চৌধুরী। সভাপতির দায়িত্বে থাকবেন ইউএনও। তবে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করবে বাংলাদেশ বিয়াম ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ। শ্রেণি কক্ষে রাখা হবে মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টর। একটি ভবন নির্মাণ করা হবে ভূমি দাতাদের বাবা—মায়ের নামে। অনারবোর্ডেও থাকবে ভূমি দাতাদের নাম।
ভূমিদাতা ডা. আবু সাঈদ আলী আহমদ’র ভাতিজা শান্তিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সোহেল তালুকদার জানান, আমরা সত্যি আজ অনেক আনন্দিত, চাচা ও চাচি আজ শান্তিগঞ্জ উপজেলার শিক্ষা প্রসারে যে অবদানটুকু রাখলেন তা ইতিহাস হয়ে থাকবে। এ ছাড়াও মানবকল্যাণে তাঁরা অনেক অবদান রেখে যাচ্ছেন, প্রতি বছর আমাদের গ্রামের অসচ্ছল মানুষদের একটি করে ঘর নিমার্ণ করে দিচ্ছেন, আমাদের পাড়ার মসজিদ নির্মাণ করেছেন, চাচার মায়ের নামে (হালিমা খাতুন ট্রাস্ট) হাওর পাড়ের শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেক ভূমিকা পালেন করে যাচ্ছেন, প্রতি বছর এই ট্রাস্টের মাধ্যমে মেধাবৃত্তি ও মেধাবী অসচ্ছল শিক্ষার্থীদের স্কলারশীপ দিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। আমরা আজ চাচা ও চাচির জন্য আরো গৌরবান্বিত হয়েছি।
ভূমিদাতা ডা. আবু সাঈদ আলী আহমদ’র ভাতিজা হাসান মাহমুদ তারেক বলেন, চাচা ও চাচির এই অবদান সারা জীবন মনে রাখবে এই অঞ্চলের মানুষ। আমরা সহ এলকার প্রতিটি মানষ আজ আনন্দিত ও উল্লাসিত। সর্বাধুনিক একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা হচ্ছে আমাদের জায়গায়। উপজেলা প্রতিষ্ঠার র্দীঘ দিন পর এমন উদ্যোগে সত্যিই আমরা মুগ্ধ। আমাদের এলাকার ছেলে-মেয়েরা এই বিদ্যালয়ে লেখাপড়া করবে। ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়র হবে। এটা অনেক আনন্দের ব্যাপর। চাচা ও চাচি সহ আমাদের এই পরিবারের সকলেই মানবতার সেবায় নিয়োজিত আছেন। মানব সেবায় অনেক কাজ করে যাচ্ছেন তারা। আমরা সকলের সহযোগিতায় এই প্রতিষ্ঠানটি বাস্তবায়ন করতে চাই। আমি আশাবাদি উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা যে উদ্যোগ নিয়েছেন দ্রুত সময়েই সেটার বাস্তবায়ন হবে।
ডা. আবু সাঈদ আলী আহমদ ও তাঁর সহধর্মিণী ডা. সুলতানা ওয়াহিদ চৌধুরী বলেন, আমরা এখানে একটি গাছ রোপন করে গেলাম, এখন এই গাছের পরিচর্যা করা এলাকার সকলের দায়িত্ব। তবে আমরা আশাবাদি এবার এই এলাকার পিছিয়ে পড়া শিক্ষাকাযক্রম অনেকটাই উন্নতি হবে এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। আমরা সকলের সহযোগীতা কামনা করি।
তারা বলেন, প্রথমে আমরাই উদ্যোগ নিয়েছিলাম বাবা—মা’র নামে একটি স্কুল প্রতিষ্ঠা করার। একটি সাইনবোর্ডও ঝুলিয়েছিলাম। নানা কারণে সেটা আর হয়ে উঠেনি। এখন আবার কথা হচ্ছিলো স্কুল প্রতিষ্ঠার। তন্মধ্যে ইউএনও সাহেবও আগ্রহ দেখালেন। তিনি নিশ্চিত করেছেন, আমাদের বাবা—মা’র নামে একটি ভবন থাকবে। আমরা রাজি হয়ে যাই। এলাকায় শিক্ষা ক্ষেত্রে কিছু অবদান রাখার জন্যই আমাদের এই চেষ্টা। প্রতিষ্ঠানটি বাস্তবায়ন হলে আমরা খুশি হবো। ৭৫ শতক জায়গা রেজিস্ট্রি করে দিয়েছি আজ বুধবার। এ জায়গার বর্তমান বাজার দর প্রায় ২ কোটি টাকা হবে। আমরা স্কুলের নামে জায়গাটি দিয়েছি। সকলের সহযোগিতায় স্কুলটি প্রতিষ্ঠা হলে আমাদের এলাকারই লাভ। ইউএনও সাহেব খুব পরিশ্রম করেছেন এ ব্যাপারে।
শান্তিগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুকান্ত সাহা বলেন, প্রথমে ভূমি দাতাদের ধন্যবাদ প্রায় ২ কোটি টাকা মূল্যের এতো দামী জায়গা স্কুলের নামে দান করে দেওয়ার জন্য। আমরা ভূমি রেজিস্ট্রি করে নিয়েছি। এখানে বিয়াম ল্যাবরেটরি স্কুল প্রতিষ্ঠা করা হবে। জানুয়ারি থেকেই ২০২৫ শিক্ষা বর্ষের শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। নিকটস্থ অস্থায়ী ভবনে কার্যক্রম শুরু হবে। প্রতিষ্ঠান প্রধানের দায়িত্ব পালন করবেন নির্বাহী কমিশনার (ভূমি) ফজলে রাব্বানী চৌধুরী। ফেব্রুয়ারিতে নতুন একটি ভবন নির্মাণ করা হবে। স্কুলটি প্রতিষ্ঠায় সকলের সহযোগিতা কামনা করছি। সেই সাথে সরকার ও এলাকার প্রবাসী-ব্যবসায়ী সহকলের সম্মিলিত প্রচেষ্ঠায় আমরা ২০২৫ সালের মধ্যেই স্কুলটির পুরো ভবনে নির্মাণ করতে পারবো। সকলের সহযোগিতায় আমরা এই অঞ্চলের শিক্ষাক্রম ঢেলে সাজাতে চাই।