আল হেলাল, সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :: সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মোট ৫ জন চেয়ারম্যান পদপ্রার্থীর মধ্যে জনমত জরীপে এগিয়ে রয়েছেন ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী দিলিপ কুমার বর্মণ। প্রতিপক্ষরা তার বিরুদ্ধে হিন্দু ধর্মাবলম্বী বলে অপবাদ ও গুজব ছড়িয়ে তাকে ঘায়েল করার চেষ্টা করলেও ভোটাররা উগ্র সাম্প্রদায়িকতা ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে এবার নতুন করে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন। এছাড়া কালো টাকা ছড়িয়ে ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতাকর্মীরা ঘোড়ার লাগাম টেনে ধরবেন বলে প্রকাশ্যে হুমকী দিলেও ভোটাররা তা আমলেই নিচ্ছেননা। অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক দিলিপ কুমার বর্মণের বিজয় সুনিশ্চিত হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য সুনামগঞ্জ সদর আসনের সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আলহাজ্ব মতিউর রহমান। ধনপুর ইউনিয়নের জিগাতলা বাজারে অনুষ্ঠিত ঘোড়া প্রতীকের নির্বাচনী সভায় ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক আন্দোলনের নিবেদিত ও পরীক্ষিত সৈনিক দিলীপ কুমার বর্মণকে ঘোড়া প্রতীকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার জন্য জনগনের প্রতি উদাত্ত আহবাণ জানিয়েছেন এই প্রবীণ রাজনীতিবিদ।
বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য জেলা পরিষদের সাবেক প্রশাসক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবীর ইমন বলেন,হিন্দু মুসলিম ভাই ভাই ঘোড়া প্রতীকে ভোট চাই এই শ্লোগানের ভিত্তিতে জাতিধর্ম বর্ণ দলমত নির্বিশেষে বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় যে আওয়াজ উঠেছে তার প্রেক্ষিতে ঘোড়া প্রতীকের জয় হবে বলে আমি আশাবাদী। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের লামাপাড়া গ্রামের কৃতিসন্তান প্রধানমন্ত্রীর জাতীয় পদকপ্রাপ্ত যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা এস এম সামছুল ইসলাম বলেন,এদেশের ভাষা আন্দোলন ও গৌরবের মুক্তিযুদ্ধে দিলিপ কুমার বর্মণের পিতা দাদার অবদান রয়েছে। তাই তার ঋন শোধ করার জন্য সকল বিবেকপ্রাণ মুক্তিযোদ্ধা জনতাকে ঘোড়া প্রতীকে ভোট দানের জন্য আমি সবিনয় আবেদন জানাচ্ছি।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ঘোড়া প্রতীকে চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা দিলীপ কুমার বর্মণ বলেছেন, জয় পরাজয় বড় কথা নয় এর আগেও ২ বার উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্ব›দ্বীতা করে প্রতিবারই জনগনের মূল্যবান ভোট ও ভালবাসা পেয়েছি। কখনও ভাগ্যের কাছে আবার কখনও ষড়যন্ত্রের কাছে পরাজিত হওয়ার পরও জনগন থেকে কখনও বিচ্ছিন্ন হইনি। সুখে দু:খে সব সময় জনগনের পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। ৫ম উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ায় বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্ব›িদ্বীতা করিনি। দলীয় সিদ্বান্তকে সম্মান করেছি। এবার প্রার্থী হয়েছি শেষবারের মতো। উপজেলাবাসী যদি আমাকে নিজেদের খেদমতগার বা কামলা হিসেবে কবুল করেন তাহলে কথা দিচ্ছি আমি আমার নিজেকে জনগনের সেবায় বিলিয়ে দিয়ে উপজেলাকে স্বপ্নের মত সাজানোর চেষ্টা করবো। সকলকে অনুরোধ করবো, সন্ত্রাসমুক্ত সম্প্রীতিময় বিশ্বম্ভরপুর গঠনে ঘোড়া মার্কায় ভোট দিন। তিনি বলেন, আমার প্রয়াত পিতা, বিশ্বম্ভরপুর দিগেন্দ্র বর্মণ কলেজের জন্য ১১ কেদার জমি দিয়ে যে কলেজটি প্রতিষ্ঠা করে গেছেন সেই কলেজের সামনে দিয়েই আমার উপজেলার সম্মানিত নাগরিকগন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, থানায়, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে, ফায়ার সার্ভিস এন্ড সিভিল ডিফেন্সসহ উপজেলা সদরের প্রতিটি সরকারী সেবাকেন্দ্রে সেবা নিতে আসেন আর যান। সকলের সাথেই আমার দেখা হয় এবং আমি সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলার চেষ্টা করি।
মসজিদ মন্দিরের সাধ্যমতো উন্নয়নে সাধ্যমতো অবদান রেখে আমি আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন অতিবাহিত করে চলেছি। তাই আপনাদেরকে ছেড়ে আমার যাওয়ার কোন জায়গা নেই। আপনাদের সেবক হওয়ার জন্যই আমি বারবার আসি। এবার তৃতীয় এবং শেষবারের মত এসেছি। আপনারা সেবক হিসেবে ঘোড়া প্রতীকে ভোট দিয়ে আমাকে নির্বাচিত করুন। আমি আমার এ ক্ষুদ্র এবং বাকী জীবন আপনাদের জন্য উৎসর্গ করলাম। শুক্রবার (১৭ মে) উপজেলার ফতেপুর ইউনিয়নের সাতগাও বাজারে এক নির্বাচনী সমাবেশে উপজেলা চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী দিলীপ কুমার বর্মণ উপরোক্ত কথা বলেন।
বীর মুক্তিযোদ্ধা আবুল মহাজনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় অন্যান্যর মধ্যে বক্তব্য রাখেন ধনপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ মিলন মিয়া, আওয়ামী লীগ নেতা এডভোকেট আলমনূর হীরা, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান সোলেমান মিয়া, আমরা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান সুনামগঞ্জ জেলা শাখার সভাপতি সাংবাদিক আল হেলাল, বিশ্বম্ভরপুর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি নেছার আহমদ, ফতেপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মহিবুর রহমান তালুকদার, উপজেলা যুবলীগ নেতা আলমগীর রেজা, ফতেপুর ইউপি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সলীল তালুকদার, আওয়ামী লীগ নেতা দিপু তালুকদার, যীশু তালুকাদার, জুনায়েদ আহমদ, ডাঃ বাচ্চু মিয়া, ধনপুর ইউনিয়নের আওয়ামী লীগ নেতা মমিনুল ইসলাম মানিক, ইউপি সদস্য সাদেকুর রহমান, ইউপি সদস্য মোক্তার হোসেন, মুজিব বাজার আওয়ামী লীগ নেতা ডাঃ আব্দুল মান্নান, যুবলীগ নেতা হুমায়ূন কবীর পাপন, স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সিদ্দিক আহমদ, সলুকাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি ফজলুল হক, সাবেক সহ সভাপতি মরম আলী, আতাউর রহমান মাস্টার, যুবলীগ নেতা আনোয়ার হোসেন সবুজ, পলাশ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি আমান উল্লাহ আমান ও রাধাকান্ত দাসসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
এর আগে বৃহস্পতিবার (১৬ মে) সলুকাবাদ ইউনিয়নের মথুরকান্দি বাজারে বীর মুক্তিযোদ্ধা সৈয়দ আলীর সভাপতিত্বে ঘোড়া প্রতীকের সমর্থনে অনুষ্ঠিত সভায় স্থানীয়দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হুমায়ূন কবীর পাপন, সলুকাবাদ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মোঃ ফজলুল হক, ডাঃ মোঃ আব্দুল মান্নান, যুবলীগ নেতা দেলোয়ার হোসেন, কৃষকলীগ নেতা করম আলী এবং বুধবার (১৫ মে) রাত ৮টায় পলাশ ইউনিয়নের ছয়হারা গ্রামে ওয়ার্ড সহ-সভাপতি সিকন্দর আলীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় স্থানীয়দের মধ্যে বক্তব্য রাখেনআওয়ামী লীগ নেতা আমান উল্লাহ আমান, সেন উদ্দিন ও আব্দুল ওয়াহিদসহ স্থানীয় নেতৃবৃন্দ।
ধনপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হযরত আলী সোহেল ওরফে কালারচান বলেন, এবারের নির্বাচন নেতা বনাম জনতার নির্বাচন। কতিপয় নেতারা সুনামগঞ্জে হোটেলে বসে কালো টাকার ভাগ ভাটোয়ারা করে ভোটারদের বিক্রির ব্যবসা করছে। কিন্তু আমরা বিশ্বম্ভরপুরবাসী নিজের খেয়ে ঘোড়ার পক্ষে মাঠে গরম রেখেছি। ইনশাল্লাহ বিজয় আমাদের হবেই।
দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মোঃ তারা মিয়া, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল করিম, হাজী গিয়াস উদ্দিন, ছাত্রলীগের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক সাইফুল ইসলাম, শ্রমিক নেতা জাহের আলী, মোয়াজ্জেম হোসেন, ইমাম মাওলানা সাইদুর রহমান, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী হানিফ মিয়া, জবান আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগ মনোনিত সাবেক ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান পদপ্রার্থী মোঃ জামাল হোসেন ও মোঃ কামাল হোসেন ভ্রাতাদ্বয়, দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়নের সংরক্ষিত ১,২ ও ৩নং ওয়ার্ডের মহিলা সদস্যা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস ছাত্তার আজাদ ঈদু মিয়ার স্ত্রী আবেদা আজাদ, ৪,৫ ও ৬নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যা বীর মুক্তিযোদ্ধার কন্যা স্বরুফা খাতুন, ৩ নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ মরম আলী, ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ শফিকুল ইসলাম,৭ নং ওয়ার্ডের মোঃ আখতার জামান, সাবেক মেম্বার তীতু মিয়া,মোঃ মুর্শিদ মিয়া, গোলাপ মিয়া, গৌরাঙ্গ সরকার, যতীন্দ্র দেবনাথ, মিয়ারচরের আব্দুস ছাত্তার, আমড়িয়ার শহীদ মিয়া, মিয়ারচরের মকবুল মিয়া, বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান মকবুল হোসেন, সাবেক মেম্বার পদপ্রার্থী মোঃ শহীদ মিয়া বলেন, দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়নে বিপুল ভোটের ব্যবধানে ঘোড়া প্রতীক জয়ী হবে। উপজেলার মোট ৫টি ইউনিয়নের মধ্যে ফতেপুর, পলাশ ও দক্ষিণ বাদাঘাট ইউনিয়নে ঘোড়া প্রতীকের দূর্ঘ গড়ে উঠেছে।
এ ৩ ইউনিয়নে বিশাল ভোটের ব্যবধানে এগিয়ে আছে ঘোড়া। উগ্র সাম্প্রদায়িক অপপ্রচার,পেশী শক্তি ও কালো টাকার অপতৎপরতার মুখে ঘোড়া প্রতীকের বিজয় কতটুকু অব্যাহত থাকে সেটাই এখন দেখার বিষয়।