আজ, , ১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সংবাদ শিরোনাম :





লন্ডনে লেবার পার্টির জয়ে সুদিন ফিরবে অভিবাসীদের!

ডেস্ক রিপোর্ট :: যুক্তরাজ্যে ১৪ বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা রক্ষণশীল কনজারভেটিভ পার্টিকে হারিয়ে বিপুল জয় পেয়েছে ব্রিটিশ লেবার পার্টি। ইতিমধ্যে নতুন প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন লেবার নেতা কিয়ার স্টারমার। অপরদিকে, ‘পরাজয়’ স্বীকার করে দলীয় পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) অনুষ্ঠিত ব্রিটেনের সাধারন নির্বাচনে প্রত্যাশিত ফলাফল পেয়েছে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতার বাইরে থাকা ব্রিটিশ লেবার পার্টি। জরিপ সংস্থাগুলো অবশ্য বেশ আগে থেকেই এমন ফলাফলের পূর্বাভাস দিয়েছিল। বড় জয়ের পর ব্রিটিশ রাজা তৃতীয় চার্লসের সাথে শুক্রবার (৫ জুলাই) কথা দেখা করেন লেবার নেতার কিয়ার স্টারমার। রাজা তৃতীয় চার্লস স্টারমারকে সরকার গঠনের দায়িত্ব নেওয়ার অনুমতি দিয়েছেন। এরপরই শুক্রবার দুপুরে নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে প্রথম ভাষণ দিয়েছেন কিয়ার স্টারমার। তিনি বলেন, “পরিবর্তনের লক্ষ্যে অবিলম্বে কাজ শুরু হবে।’’ তিনি অবশ্য তার মন্তব্যে স্বীকার করেছেন যে এই পরিবর্তন ‘রাতারাতি’ সহজ হবে না। এর আগে এই লেবার নেতা তার সেন্ট্রাল লন্ডনের আসন থেকে পুনঃনির্বাচিত হন। জনমত জরিপে এগিয়ে থাকার পর বৃহস্পতিবার রাতে সমর্থকদের সামনে তিনি বলেন, “আজ রাতে সারা দেশের মানুষ কথা বলেছেন। তারা পরিবর্তনের জন্য প্রস্তুত।”

 

ব্রিটিশ হাউজ অফ কমন্সে মোট ৬৫০টি আসন রয়েছে। সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে প্রয়োজন ৩২৬ আসনের। সবশেষ তথ্য অনুসারে, এখন পর্যন্ত লেবার পার্টি ৪১২টি আসন জিতেছে, যেখানে কনজারভেটিভরা ১২১ আসনে নেমে এসেছে। মধ্যপন্থি লিবারেল ডেমোক্র্যাটরা পেয়েছে ৭১টি আসন। অপরদিকে বামপন্থি গ্রিন পার্টি পেয়েছে চারটি আসন এবং চারটি আসন পেয়েছে কট্টর ডান রিফর্ম পার্টি। ৬১ বছর বয়সি সাবেক মানবাধিকার আইনজীবী কিয়ার ২১০৯ সালে লেবার পার্টির দায়িত্ব নেন। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে জয়ী হওয়া চতুর্থ লেবার নেতা।

 

অপরদিকে, রক্ষণশীলদের জন্য বৃহস্পতিবার রাত ছিল দুঃস্বপ্নের। দলটির ২০০ বছরের নির্বাচনী ইতিহাসে এবার সবচেয়ে কম আসন পেতে যাচ্ছে। জ্যাকব রিস-মগ, পেনি মর্ডান্ট এবং লিজ ট্রুসসহ বেশ কয়েকজন তারকা কনজারভেটিভ ব্যক্তিত্ব নিজ নিজ আসনে পরাজিত হয়েছেন। শুক্রবার (৫ জুলাই) সকালে সমর্থকদের সামনে দেওয়া প্রতিক্রিয়ায় এমন ফলাফলের প্রেক্ষিতে ‘ক্ষমা’ চেয়ে দলীয় পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক বলেন, “ব্রিটিশ জনগণ আজ একটি নির্মম রায় দিয়েছে। এই রায় থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। আমি এই পরাজয়ের দায় নিচ্ছি।”

 

তিনি কিয়ের স্টারমার ও লেবার পার্টিকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। এই মধ্যপন্থি বাম নেতা এমন সময়ে ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন যখন পশ্চিমাদের সবচেয়ে বড় দুই মিত্র দেশ যুক্তরাষ্ট্রে ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ফ্রান্সে মারিন ল্য পেন ক্ষমতায় আসার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।
এবারের নির্বাচনে আসন সংখ্যার ভিত্তিতে লেবার পার্টি বড় জয় পেলেও ভোট শতাংশের ভিত্তিতে লেবার পার্টি অতীতের চেয়ে বড় ফল করতে পারেনি বলে জানিয়েছে জরিপ সংস্থা ইপসোস। ২০১৯ সালের তুলনায় প্রায় কাছাকাছি ভোট পেয়েছে দলটি।

সামনের পার্লামেন্টেলিবারেল ডেমোক্র্যাটরা (সেন্ট্রিস্ট) আবারও তৃতীয় শক্তিতে পরিণত হতে যাচ্ছে।

অপরদিকে, অভিবাসনবিরোধী কট্টর ডান নেতার নাইজেল ফারাজ অষ্টম প্রচেষ্টার পরে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে প্রবেশ করতে যাচ্ছেন। প্রথম বারের মতো চার আসন নিয়ে খাতে খুলেছে এই আলোচিত রাজনীতিবিদের রিফর্ম পার্টি। যদিও জরিপ সংস্থাগুলো নাইজেল ফারাজ এর দল ১৪টি আসন পেতে পারেন বলে পূর্বাভাস দিয়েছিল।

কট্টর ডান রিফর্ম পার্টি ভোট শতাংশের হিসেবে প্রায় ১৪ শতাংশ ভোট পেতে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি। বৃহস্পতিবারের নির্বাচনের আগে দুই প্রধান দলের প্রচারণায় অভিবাসন এবং রুয়ান্ডা নীতি গুরুত্ব পেয়েছিল। তবে এবার লেবার পার্টি অভিবাসন নিয়ে প্রথাগত বাম অবস্থান থেকে সরে এসেছে ‘মধ্যপন্থি’ অবস্থান নিয়েছে।

নির্বাচনী ইশতিহার এবং বিভিন্ন ঘোষণায় লেবার পার্টির অভিবাসন নিয়ে সম্ভাব্য পদক্ষেপসমূহ:
ব্রিটেনের সামগ্রিক নিট অভিবাসনের হার কমিয়ে আনা, রুয়ান্ডা নীতি বাতিল করে উপকূলগুলোকে আরো সামরিকীকরণ করা, ইংলিশ চ্যানেলে নৌকা ঠেকাতে ‘বর্ডার সিকিউরিটি কমান্ড’ নামে নতুন সীমান্তরক্ষী বাহিনী গঠন, মানবপাচারকারীদের ঠেকাতে কাউন্টার টেররিজম ফোর্সকে কাজে লাগানো ও যুক্তরাজ্যকে মানবপাচারকারীদের জন্য ‘বৈরি দেশ’ হিসেবে গড়ে তোলা।

রুয়ান্ডা পরিকল্পনার সমালোচনা করে কিয়ার স্টারমার বলেছিলেন, ‘‘বর্তমান সরকার হয়তো অভিবাসীদের নিয়ে রুয়ান্ডাতে ফ্লাইট চালিয়ে যেতে পারবে কিন্তু এই পরিকল্পনা কাজ করবে না কারণ আমাদের আশ্রয় ব্যবস্থার পুনর্গঠন করতে হবে৷ অনিয়মিত পথে যুক্তরাজ্যে আসা অভিবাসীর সংখ্যা নাটকীয়ভাবে কমিয়ে আনতে হবে।” লেবার পার্টির এই রাজনীতিবিদ বলেন, রুয়ান্ডা পরিকল্পনার অর্থ ব্যবহার করে বর্ডার সিকিউরিটি কমান্ড গঠন করা হবে৷ অনিয়মিত অভিবাসন ঠেকাতে এই কমান্ডে বিশেষ কর্মকর্তা নিয়োগের কথাও জানান তিনি৷

এক কথায়, এবারের লেবার ইশতেহারে অভিবাসীদের জন্য বড় কোন ঘোষণা ও চমক রাখা হয়নি। তবে সার্বিক অভিবাসন কমিয়ে আনা এবং অনিয়মিত অভিবাসনবিরোধী কড়া অবস্থান নিলেও রক্ষণশীলদের বিপরীতে লেবার পার্টি মানবাধিকার সম্পর্কিত ইউরোপীয় কনভেনশনে (ইসিএইচআর) এর স্বাক্ষরকারী দেশ হিসাবে এটিকে মেনে চলবে বলে জানিয়েছে।

এখানে ক্লিক করে শেয়ার করুণ