ডেস্ক রিপোর্ট :: জয়ের লক্ষ্যে নেমে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল বাংলাদেশ। সেখান থেকে পাল্টা আক্রমণে ঝড় তোলেন রিশাদ হোসেন। গড়েন বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড। তার সঙ্গে জ্বলে ওঠেন টেলএন্ডারের তাসকিন হোসেনও। তবে শেষ পর্যন্ত ২৮ রানে হেরে তিন ম্যাচে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ খুইয়েছে স্বাগতিকরা।
আজ শনিবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলতে নামে দুদল। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টায় ম্যাচটি শুরু হয়। আগের দুই ম্যাচ সমতা থাকায় এ ম্যাচ অলিখিত ফাইনালে পরিণত হয়েছিল। যেখানে প্রথমে ব্যাট করা লংকানরা নির্ধারিত ২০ ওভার শেষে ৭ উইকেট হারিয়ে ১৭৪ রান করে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে ১৯.৪ ওভারে ১৪৬ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।
১৭৫ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে লংকান পেসার নুয়ান থুশারার হ্যাটট্রিকে ৫ উইকেট হারিয়ে ২৫ রান তোলে স্বাগতিকরা। ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুতেই বিপর্যয়ে পড়ে বাংলাদেশ। দলীয় ১৩ থেকে ১৫ রানের মধ্যে টপঅর্ডারের ৪ উইকেট হারায় তারা। তৃতীয় ওভারে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার বলে ব্যক্তিগত ৭ রানে ফেরেন লিটন দাস। এরপর নুয়ান থুশারা চতুর্থ ওভারে হ্যাটট্রিক তুলে নেন। অধিনায়ক নাজমুল হাসেন শান্ত ও তাওহীদ হৃদয় বোল্ড হওয়ার পর মাহমুদউল্লাহ এলবি হন। এই পেসার নিজের পরের ওভারে সৌম্য সরকারকে (১১) বোল্ড করেন।
প্রথম ম্যাচে অসাধারণ খেলা জাকের আলিও দ্রুত ফিরে যান। তাকে ৪ রানে ফেরান ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা। তবে এরপরই মেহেদী হাসান ও রিশাদ হোসেন দারুণ এক জুটি গড়েন। যার কেন্দ্রে ছিলেন রিশাদ। তারা ৩১ বলে ৪৪ রান তোলেন। হাসারাঙ্গার দ্বিতীয় শিকার হয়ে মেহেদী ১৯ রানে ফেরেন।
কিন্তু রিশাদ আক্রমণ চালিয়ে যান। একে একে ৭ ছক্কায় করলেন ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি। গড়লেন বাংলাদেশের হয়ে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ছক্কার রেকর্ড। সিরিজের প্রথম ম্যাচে ৬টি ছক্কা মেরেছিলেন জাকের আলি। তাকে ছাড়িয়ে যাওয়া ছক্কায় স্রেফ ২৬ বলে পঞ্চাশ পূর্ণ করেছেন রিশাদ। আট বা তার নিচে নেমে ফিফটি করা দ্বিতীয় বাংলাদেশি ব্যাটার রিশাদ। ২০১৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ৮ নম্বরে নেমে ২৬ বলে ৫২ রান করেছিলেন আফিফ হোসেন।
ডানহাতি রিশাদ অষ্টম উইকেটে তাসকিনকে নিয়ে ২১ বলে ৪১ রান তুলে বাংলাদেশকে জয়ের স্বপ্ন দেখান। তবে মহেশ থিকশানার বলে ইতি হয় রিশাদের ইনিংস। তিনি ৩০ বলে ৭টি ছক্কাতেই ৫৩ রানে ফেরেন। তবে শেষ ওভার পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যাওয়া তাসকিন অবশেষে ২১ বলে ৩১ রানে শানাকার বলে আউট হন। তাসকিন ৩টি চার ও ২টি ছক্কায় নিজের ইনিংস সাজান।
আগের৭ টি-টোয়েন্টিতে ৬ উইকেট পাওয়া থুশারা এ ম্যাচেই ৫টি উইকেট দখল করেন। লংকানদের হয়ে হাসারাঙ্গা আরও ২টি উইকেট পান।
টস হেরে এর আগে প্রথমে ব্যাটিংয়ে নামা শ্রীলংকার প্রথম উইকেট বাংলাদেশ তুলে নেয় ৩.১ ওভারে। দলীয় ১৮ রানে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভাকে ব্যক্তিগত ৮ রানে ফেরান তাসকিন আহমেদ। সৌম্য সরকার ক্যাচ ধরেন। এরপর জুটি গড়ার চেষ্টা করলেও তা ভেঙে দেন রিশাদ হোসেন। এই লেগস্পিনারের বল তুলে মারতে গিয়ে ব্যক্তিগত ১২ রানে আউট হন কামিন্দু মেন্ডিস। শরিফুল ইসলাম দারুণ ক্যাচটি লুফে নেন।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে কুশল মেন্ডিস ও ওয়ানিন্দু হাসারাঙ্গা ৩১ বলে ৫৯ রানে জুটি গড়েন। অবশেষে এই জুটি ভাঙেন মোস্তাফিজুর রহমান। ব্যক্তিগত ১৫ রানে শরিফুল ইসলামের ক্যাচে লংকান অধিনায়ক হাসারাঙ্গাকে বিদায় করেন কাটার মাস্টার। এরপর চরিথ আসালাঙ্কাকে বেশিক্ষণ টিকতে দেননি শরিফুল। এবার মোস্তাফিজের ক্যাচে আসালাঙ্কাকে (৩) মাঠ ছাড়া করান শরিফুল।
তবে একপ্রান্ত আগলে রেখে ব্যাট করা কুশল মেন্ডিসকে অবশেষে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান তাসকিন। ১৭তম ওভারের পঞ্চম বলে ডানহাতি এই তারকা বোলারকে তুলে মারতে গেলে সৌম্য সরকারের ক্যাচে পরিণত হন কুশল। এই ওপেনার ৫৫ বলে ৬টি চার ও সমান ছক্কায় ৮৬ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন। এরপর ঝড় তোলার চেষ্টা করা অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে ১০ রানে ফেরান ব্যক্তিগত ১০ রানে বিদায় করেন রিশাদ। শেষ ওভারের শেষ বলে দৌড়ে দুই রান নিতে যাওয়া দাসুন শানাকাকে দারুণভাবে রান আউট করেন উইকেটকিপার লিটন দাস। শানাকা ৯ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় ১৯ রান করেছেন।