জনৈক শ্রদ্ধেয়র শেয়ার করা একটি পোষ্টে প্রশ্ন করা হয়-
“বন্দর বাজার কুদরত উল্লাহ জামে মসজিদ কি জামায়াতের? আমি প্রায়শই ঐ মসজিদে সালাত আদায় করে থাকি, ৮০% মুসল্লী কাউমীয়া!তাহলে আজকের তীর জামায়াতের দিকে কেন?”
উত্তর :
কুদরতউল্লাহ মসজিদ এক সময় ফুলতলি গ্রুপের নিয়ন্ত্রণে ছিলো। এই গ্রুপ মসজিদের সাথে একটি হেফজখানাও চালু করেছিলো, সেই হেফখানার শিক্ষকও ফুলতলি মাসলাকের ছিলো। মসজিদে নিয়মিত মিলাদ-কিয়াম চলতো। ফুলতলি মাসলাকের আলেমরা নিয়মিত আসতেন। আল্লামা আব্দুল লতিফ ফুলতলি (র.) কেও আমি কুদরতউল্লাহ মসজিদে জুম্মার বয়ান দিতে দেখেছি।
মরহুম মাওলানা দেলওয়ার হোসেন সাইদী সাহেব যে বছর আলিয়া মাদরাসার মাঠে মিলাদ-কিয়াম করলেন তখন ফুলতলি গ্রুপ ভাবলো ইত্তেহাদুল উম্মাহ ও সাঈদী সাহেব তাদের। কুদরতউল্লায় তারা সঈদী সাহেবকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসলো। কুদরতউল্লায় ইত্তেহাদুল উম্মার অফিস করা হলো। ফুলতলি মাসলাকের অনেকে তখন বলতেন যে, সাঈদী সাহেব শর্ষিনা আলিয়া মাদরাসার ছাত্র, তিনি কিয়াম-মিলাদের পক্ষে, তাই তিনি আমাদের।
হয়তো তাদের বক্তব্য সত্য ছিলো। হয়তো এটা জামায়াত ও সাঈদী সাহেবের কৌশল ছিলো।
কিন্তু ধীরে ধীরে সাঈদী সাহেবের খোলসটা সরে গেলো, তিনি প্রকাশ্যে জামায়াতের পক্ষে কথা বলতে শুরু করলেন, এদিকে কুদরতউল্লাহ মসজিদও জামায়াতের নিয়ন্ত্রণে যেতে লাগলো।
আমার যতটুকু স্মরণ হয়, খন্দকার সোবহান সাহেব প্রথম জামায়াত সমর্থিত কুদরতউল্লার মুতাওয়াল্লী। ধীরে ধীরে ইমাম-মুয়াজ্জিনও জামায়াতের হয়েগেলেন। কুদরতউল্লার ইমাম শ্রদ্ধেয় মাওলানা বশিরুজ্জান যখন জামায়াতের প্রতিষ্ঠাতা মাওলানা মওদুদীর ভুলকে শুদ্ধ বলে ‘সত্যের আলো’ বই লিখলেন, তখন কাজির বাজার মাদরাসার প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবীবুর রহমান (র.) লিখলেন ‘বিংশশতাব্দীর জাহেলিয়াত মওদুদীর ফিতনা’ বই। জামায়াতের ইমামকে বাদ দিতে দাবী তুললেন প্রিন্সিপাল মাওলানা হাবীবুর রহমান (র.) ও অন্যান্য আলেমরা।
খন্দকার আব্দুস সুবহানের নেতৃত্বে জামায়াতে ইসলামী মাওলানা হাবীবুর রহমানের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে গেলো। সিলেটের আলেম সমাজ ফতোয়া দিলেন এই ইমামের পিছনে নামাজ হবে না। জামায়াত এই কথাগুলোকে গুরুত্ব না দিয়ে বরং কুদরতউল্লাহ মসজিদকে পূর্ণাঙ্গ দখল করে নিলো। ফুলতলি গ্রুপ আউট। এরপর থেকে এই মসজিদের কমিটি, ইমাম-মুয়াজ্জিন সবাই জামায়াতি। এমন কি রমজানে বিভিন্ন স্থান থেকে জামায়াতিরা এই মসজিদে এসে ইতিকাফও করেন। কওমী ঘরের খুব কম মানুষ এই মসজিদে নামাজ পড়েন। পরিমাণে ১০% হবেন। আমি কুদরতউল্লাহ মার্কেটে কওমী ঘরের অনেক ব্যবসায়ীকে দেখেছি কুদরতউল্লাহ মসজিদে নামাজে না এসে নিজ দোকানে জামায়াতে নামাজ পড়তে। কেউ কেউ আশপাশের মসজিদে গিয়েও নামাজ পড়েন। কওমী ঘরের যারা আগের আকিদা বিষয়ক দ্বন্দ্ব জানেন না তারাই শুধু কুদরতউল্লাহ মসজিদে আজও নামাজ পড়েন।
শেষকথা : কুদরতুল্লাহ মসজিদের মুতওল্লি কোন দলের? ইমাম কোন দলের? ইস্ট লন্ডন মসজিদের ইমাম কোন দলের? তিনটার উত্তরেই বলতে হয়- জামায়াতের। লেখক: কবি ও গবেষক