শাহ মমসাদ আহমদ
আজ ৩০শে মে, দারুল উলুম দেওবন্দের প্রতিষ্ঠা দিবস।আজকের দিনেই ১৮৬৬ সালে প্রতিষ্টিত হয় দারুল উলুম দেওবন্দ।যাত্রা শুরু হয় ইতিহাসের বাক ঘুরানো কওমী কাফেলার।
অতি সংক্ষেপে কওমী পরিবারের কয়েকটি বৈশিষ্ট তুলে ধরছি। ১. কওমী পরিবার ইমাম আবু হানিফা (রঃ) এর স্বার্থক অনুসারী।আবু হানিফা শব্দের শাব্দিক অর্থ অত্যাধিক একনিষ্ঠ, কওমী সন্তানরাও আহলে সুন্নাতের নীতি আদর্শ বাস্তবায়নে অত্যাধিক একনিষ্ঠ। তাইতো তাদের বলা হয়, মৌলবাদী, যারা ইসলামের মুল চেতনা একনিষ্ঠভাবে ধরে আছে যুগ যুগ ধরে।
২. কওমী সন্তানরা দ্বীন-ইসলামের সীমান্ত রক্ষী,দেশের সম্পদ চোরাচালান ও অবৈধভাবে অন্যদেশের মালামাল দেশে আনা রোধকল্পে সীমান্ত রক্ষী যেভাবে সদাজাগ্রত বীর, কওমী সন্তানেরা ও দ্বীন ইসলামে নতুন সংযোজন (বেদাত) ও দ্বীন থেকে কিছু কাটছাঁট (মডারেট ইসলাম) রোধে সদা জাগ্রত বীর।
৩. কওমী সন্তানেরা যে দেশেই বসবাস করে সে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে অগ্রনী ভুমিকা রাখেন ও রক্ষায় সচেষ্ট থাকেন, স্বাধীনতার চেতনা তাদের রক্তে বহমান,ভারত উপমহাদেশের স্বাধীনতা অর্জনে তাদের পুর্বপুরুষ যে কুরবানী পেশ করেছেন, সে চেতনা ধারণ করে ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান আর আফগানিস্তানের স্বাধীনতা রক্ষায় নিজ দেশের প্রেক্ষাপটে কওমী সন্তানরা আজও তৎপর। মুক্তিকামী জনতার কল্যাণে কওমী সন্তানেরা নিবেদিত, একথা কওমী বিদ্বেষীরা স্বীকার করতে বাধ্য।
৪. কওমী সন্তানেরা ভোগ করতে জানেননা, ত্যাগ করতে জানেন, বালাকোট, শামেলী, ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষায় ধর্ম দ্রো হী দে র চক্রান্ত রোধে শাপলা চত্বরে রক্ত দিয়েছে কওমী সন্তানেরা, প্রয়োজনে আরও কুরবানী দিবে, অপশক্তির সাথে আপোষ করবেনা, তাদের রক্ত ব্যবহার করে ভোগকারী মীরজাফরদের সময়ই জবাব দিবে ইনশাআল্লাহ।
৫. কওমী সন্তানেরা দেশ -জাতির স্বার্থে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের সাথেও ঐক্য করতে পারে, ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামে উলামায়ে দেওবন্দ এভাবেই শিক্ষা দিয়েছেন।
কওমী সন্তানেরা সংকীর্ণ নয়, বৃহত্তর স্বার্থে উদার।
৬. কওমী সন্তানেরা নিজ পিতা মাতা ও শিক্ষকদের শ্রদ্ধা করা, তাদের সেবাকে শুধু সৌজন্যতা আর কর্তব্য নয় এবাদত মনে করে, ছাত্র উস্তাদের এমন আত্মার আত্মীয়তা আর ও কোথাও পাওয়া যাবেনা, একথা অকপটে বলা যায়।
৭. কাওমী সন্তানের পরিচয় দিয়ে গিয়ে দারুল উলুমের ভুতপুর্ব মুহতামীম হাকীমুল ইসলাম আল্লামা ক্বারী মুহাম্মাদ তাইয়েব (রহঃ) বলেন, কওমীরা দ্বীনী দিক থেকে মুসলমান, আক্বীদাগত দিক থেকে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত, মাযহাবের দিক থেকে হানাফী, দর্শনের দিক থেকে আশআরী ও মাতুরীদি, মাশরাবের দিক থেকে সুফী, তরীকার দিক থেকে চিশতী ও নক্সবন্দী, চিন্তাধায় ওয়ালীউল্লাহী, মুলনীতির দিক থেকে কাসেমী, শাখাগত মাসআলার দিক থেকে রাশীদী, সামগ্রিক দিক থেকে মাহমুদী এবং নিসবতের দিক থেকে দেওবন্দী।
১৮৬৬ সালের ৩০শে মে প্রতিষ্ঠিত হয় দারুল উলুম দেওবন্দ, এই দেওবন্দই কওমী মাদ্রাসার কেন্দ্রবিন্দু। এখান থেকেই সারা বিশ্বে গড়ে উঠেছে অসংখ্য কওমী মাদরাসা, হাকীমুল ইসলাম বর্নিত দিক গুলিই দেওবন্দ তথা কওমীদের ব্যাপক পরিচয়।
মুলত কওমী মাদরাসা নিছক কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, একটি মানতাবাদী বৈপ্লবিক কেন্দ্র, একটি চিন্তাধারা,
একটি চেতনার বাতিঘর, হেদায়াতের দ্রুবতারা,একটি দর্শন, একটি বিপ্লব, একটি ইলহামী দ্বীনী সূতিকাগার, হক ও হক্বানিয়াতের এক দুর্ভেদ্য দুর্গ এবং হেরার মশালবাহী এক মাকতাবে ফিকির।
এবারে উলামায়ে দেওবন্দের চারটি বৈশিষ্ট তুলে ধরছি,
১. বাতিলের জবাব গুলি বা গালি দিয়ে নয়। দালিল দিয়ে দেয়া।
২. উলামায়ে দেওবন্দ تعصبগোড়া নন কিন্তু দ্বীনের ক্ষেত্রে تصلب কঠোর। উলামায়ে দেওবন্দের মধ্যে تشدد অত্যাধিক কঠোরতা নেই তবেتسدد সঠিক করনের স্পৃহা আছে।
৩. উলামায়ে দেওবন্দ আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতভুক্ত অন্যান্য জামাতের সাথে মতভেদ সত্বেও খুবই নরল দীল কিন্তু বাতিলের বিরুদ্ধে আপোষহীন।
اشداء على الكفار رحماء بينهم
৪. উলামায়ে দেওবন্দ বাতিল চিন্তার বিরুদ্ধে লড়াই করেন, কোন ব্যাক্তির বিরুদ্ধে নয়। একজন ব্যক্তি যতই কঠোর বাতিলপন্থী হোক ব্যাক্তিগত আক্রমণ এড়িয়ে চলেন।
(মুতাকাল্লিমে ইসলাম মাওলানা ইলিয়াস গুম্মান হাফিজাহুল্লাহু এর বক্তব্য অবলম্বনে)
পরিশেষে বলবো,
هر وقت سر بلند
ديوبند ديوبند
সর্বদা সুমহান দেওবন্দ এরই নাম। আল্লাহ আমাদের দেওবন্দের চেতনা ধারণও লালনের তাওফিক দিন।
লেখক: মুহাদ্দিস ও কলামিস্ট, সিলেট- মোবাঃ 01711-266688