আজ, , ১৭ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সংবাদ শিরোনাম :





আমি কর্তব্যরত অবস্থায় আমার দ্বারা কেউ যদি ভুক্তভোগী হয়ে থাকেন…

জগন্নাথপুর থানার কর্মরত অফিসার মোহাম্মদ আল-আমিন তিনি বলেন আমি জগন্নাথপুর থানায় কর্মরত আছি। এই সময়টা মোটামুটি দীর্ঘ। ভুল করে বা নিজের অজান্তে, কাউকে জুলুম করা, অত্যাচার করা, বা কষ্ট দেওয়া, আমার পেশার আওতাভুক্ত না। থানার কর্মরত অফিসার মোহাম্মদ আল-আমিন- এর লেখাটি দৈনিক জগন্নাথপুর পত্রিকার পাঠকদের জন্য নিম্নে হুবহু তুলে ধরা হলো

 

আলহামদুলিল্লাহ আমি বাংলাদেশ পুলিশে চাকরি করি। এই ২১+ বছরে দিনে -রাতে যা যা দেখেছি, সমাজের সেসব বিপ্রতীপ বৈশিষ্ট্য অন্য কোন সার্ভিসের কেউ দেখতে পাবেনা কখনই।

 

ছোট্ট একটা ঘটনা বলি। একবার বেশ রাতে জরুরি কাজে পাশের একটি জেলায় যাচ্ছিলাম। গাড়ি চলাচল খুবই কম। দূর থেকে দেখা গেল রাস্তার পাশে দাঁড়ানো একটি জীপের একটু পিছনে দাঁড়িয়ে একজন ভদ্রলোক প্রাকৃতিক কাজ সারছিলেন। আমরা কাছে যেতে যেতে উনি কর্মটি সেরে গাড়িতে উঠলেন। ক্রস করে যাওয়ার সময়ে দেখলাম খুবই দামি গাড়ি। ভাবতে লাগলাম, রাত না হয়ে দিনের বেলায় হলে উনি কি এটা করতেন? নিশ্চয়ই না! তারমানে রাত তথা অন্ধকার কিংবা নির্জনতা আমাদের সাইকোলজি চেঞ্জ করে দেয়। রাত যত গভীর হয়, মানুষ তত ডেসপ্যারেট হয়। অজস্র না বলা ঘটনার স্বাক্ষী হয়ে একদিন মারা যাব। এ সমাজের মানুষ স্বভাব নিন্দুক।পুলিশের কেউ দুঃখ কষ্ট পেলে তাতে এ সমাজের লোকেরা (ব্যতিক্রম বাদে) ব্যথিত হয়না। কারন পুলিশের নিন্দার অভাব নেই তাদের কাছে। তবে হ্যাঁ, মাঝে মাঝে দু’একজন খুব নন্দিত ব্যক্তিকেও বেকায়দায় দেখে ফেলায় ছলছল চোখে হাতজোড় করে বলেছিলেনঃ “ভাই, আপনি আমার ভাই! আর কিছু বললাম না।” হেসে দিয়ে বলেছি, মানীর মান আল্লায় রাখে, আমি কেউনা। তবে এরকম আর করিয়েন না।আল্লাহ বারবার মাফ করবেন না।

লেখার ক্ষমতা নেই আমার। অবু যদি বেঁচে থাকি তবে অবসরের পরে আমার অনেক অনেক ভালবাসার এই নীলকন্ঠ ডিপার্টমেন্ট নিয়ে লেখার ইচ্ছে আছে।
সমাজের প্রায় সব বিষ শুষে নিয়ে আমরা বিষে ভারাক্রান্ত, সব ময়লা পরিষ্কার করি বলে আমার কাপড় নোংড়া, আমাদের শরীর থেকে গন্ধ আসে। তাই তোমরা গালি দাওনা ??

 

তুমি মহারাজ, সাধু হলে আজ, আমি আজ চোর বটে! শুধু বেকায়দায় পড়লে আমি ভাই!!

 

আমি বিগত ০৬-১২-২০২০খ্রিস্টাব্দ হইতে আজ পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর থানায় কর্মরত আছি। এই সময়টা মোটামুটি দীর্ঘ। ভুল করে বা নিজের অজান্তে, কাউকে জুলুম করা, অত্যাচার করা, বা কষ্ট দেওয়া, আমার পেশার আওতাভুক্ত না।

 

আমার দ্বারা কেউ যদি নির্যাতিত হয়ে থাকেন, তাহলে ওই নির্যাতন ছিল সম্পূর্ণ পরিকল্পিত এবং জেনে-বুঝে।

 

আমি কর্তব্যরত অবস্থায় আমার দ্বারা কেউ যদি ভুক্তভোগী হয়ে থাকেন…..

চিন্তা ও বাকশক্তি’র স্বাধীনতার এই সময়ে, আপনারা নিঃসংকোচে আমার কমেন্ট বক্সে মন্তব্য করতে পারেন। আর যদি ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে থাকেন অথবা উপকৃত হয়ে থাকেন তবে সেই অনুপ্রেরণা নিয়ে, দেশ ও জনসাধারণের সেবায় নিয়োজিত থাকতে চাই অবশিষ্ট কর্মজীবন।

 

সাদা চোখে দোষারোপ করে ফেলা অনেক সহজ, অনেক সহজের উত্তর আপনাদের সাদা চোখ দেখেনা, জানতেও পারেনা। আর আমাদের জানানোর সময়ও নেই। দোষীকে নিয়ে প্রতিবাদ করুন, তার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করুন সেটা সাধারণের মত আমাদেরও চাওয়া! কিন্তু আইন যেমনটি বলে, একজন নিরপরাধীও যেন শাস্তি না পান! ব্যক্তি আমি থেকে ধরে আপনারা, আমরা কেউ কি আইনের এই সৌন্দর্যের সাথে একমত হতে পেরেছি? আদৌ কি পারবো? ভুল শুধু একদিকেই হয়না, হয়নি, হবেনা! ভুল চারিদিকে হয় এবং হচ্ছে … কিন্তু সেটি স্বীকার করে নেবার জন্য যে মানসিক শক্তি বা দৃঢ়তার প্রয়োজন, তা থেকে আমরা যোজন যোজন দূরে দাঁড়িয়ে আছি!

আমার ফাঁসি চাই বইটির প্রচ্ছদ্য থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে, আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি আমি, “আমার শাস্তি চাই”

 

লেখক: মোহাম্মদ আল-আমিন

ডিআইও- ডিস্ট্রিক্ট ইন্টিলেন্স অফিসার জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ- 0 1716-249966

এখানে ক্লিক করে শেয়ার করুণ