আজ, , ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ

সংবাদ শিরোনাম :





লাশ নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে হঠাৎ ফোন, ‘আমি মরে যাইনি, বেঁচে আছি

ডেস্ক রিপোর্ট :: স্বজন ভেবে সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত নারীর লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন পরিবারের লোকজন। পথে হঠাৎ আসে একটি ফোন কল। ধরতেই বলছেন, ‘আমি মরে যাইনি, বেঁচে আছি।’ আকস্মিক লাশবাহী ভ্যানে পিনপতন নিরবতা নেমে আসে। পরে ভ্যান ঘুরিয়ে নেওয়া লাশটি নেওয়া হয় থানায়। সোমবার (১১ নভেম্বর) সন্ধ্যা আনুমানিক সাড়ে ৭টার দিকে সড়কের তালা উপজেলার সীমান্তবর্তী আঠারোমাইলের কাঞ্চনপুর এলাকায় ওই নারীকে রাস্তার পাশে গুরুতর আহত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে নজরুল ইসলাম নামের এক ভ্যানচালককে দিয়ে তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তাৎক্ষণিক লাশের পরিচয় শনাক্ত করা যায়নি। ঘটনার কয়েক ঘণ্টা পর খবর পেয়ে তালা উপজেলার সদর ইউনিয়নের জেয়ালা গ্রামের মৃত জনাব আলী নিকারীর সন্তানরা লাশটি তাদের নিখোঁজ বোন রাজিয়ার (৩৫) বলে শনাক্ত করেন। তারা লাশ বাড়ি নেওয়ার দাবি জানান। পরে তালা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আহাদুজ্জামান কারও কোনো অভিযোগ না থাকায় লাশটি রাজিয়ার বলে নিশ্চিত হয়ে দাবি করা পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেন। এরপর তারা রাজিয়ার লাশ ভ্যান করে গ্রামের বাড়িতে রওনা দেন। পথেই বাধে বিপত্তি! হাজরাকাটি বাজার পর্যন্ত পৌঁছালে লাশবাহী বোনের মোবাইলে ফোন আসে রাজিয়ার ব্যবহৃত ফোন নম্বর থেকে। অপর প্রান্ত থেকে বলছেন, ‘আমি মরে যাইনি, বেঁচে আছি। জীবিকার প্রয়োজনে এক রাজমিস্ত্রির সঙ্গে দূরে গেছি। তাই রাতে বাড়ি ফিরতে পারব না।’

ফোনের অপর প্রান্তের কণ্ঠ শুনে চিনতে পারেন, জীবিত বোনের গলা। এরপর তারা বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর চলে পিনপতন নিস্তব্ধতা। এরপর শোকের ভ্যানে খানিকটা শান্তির পরশ, পরক্ষণেই লাশবাহী ভ্যানটিকে নেওয়া হয় ফের তালা থানায়। রাজিয়ার ভাই সাহেব আলী নিকারী সাংবাদিকদের জানান, দুর্ঘটনায় বহন করা লাশের মুখ বিকৃত হওয়ায় পরনের বোরকা, ওড়না ও শরীরের গঠন দেখে তারা অনেকটা নিশ্চিত হন যে লাশটি তাদের বোন রাজিয়ার। এদিকে থানায় লাশ পৌঁছানোর পরিচয় শনাক্ত করতে পিবিআইয়ের সহযোগিতা কামনা করে পুলিশ। এরপর তারা নিশ্চিত হয় যে লাশটি পাইকগাছার কপিলমুনি ইউনিয়নের কাজিমুছা-রামচন্দ্র নগরের জহর হালদারের মেয়ে সেলিনা বেগমের (৩৯)। এ বিষয়ে নিহত সেলিনার ভাই বেলায়েত হালদার জানান, সেলিনা তাদের সবার ছোট বোন। সে মানষিক রোগী। বিভিন্ন সময় বাড়ির কাউকে না জানিয়ে এদিক-সেদিক চলে যায়। দুদিন আগে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি। এরপর বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও সন্ধান পাননি তারা। শেষে জানতে পারলেন মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় সেলিনা নিহত হয়েছেন। ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে তালা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ শাহিনুর রহমান কালবেলাকে বলেন, গত সোমবার ডুমুরিয়া থানা এলাকায় সড়ক দুর্ঘটনায় আহত অবস্থায় সেলিনা নামের ওই নারীকে তালা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আনা হয়। পরে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাতে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত নারীর পরিবারের কোনো অভিযোগ না থাকায় ময়না তদন্ত ছাড়াই লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। এর আগে অন্য একটি পরিবার তাদের বোন দাবি করে লাশ গ্রহণ করে নিল কীভাবে, এ প্রশ্নের জবাবে তিনি ঘটনাটি অস্বীকার করে বলেন, এক পক্ষ লাশটি তাদের বোন দাবি করেছিল। পরে আমরা যাচাই-বাছাই করে আসল পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি।

এখানে ক্লিক করে শেয়ার করুণ