আবুল বাশার মুহাম্মদ মুশাহিদ:
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখল, সে আমাকেই দেখল। কেননা বিতাড়িত শয়তান আমার রূপ ধরতে পারে না। আর যে ব্যক্তি আমার ওপর মিথ্যাচার করল, সে তার দোজখের আসন গ্রহণ করল। (সহিহ বোখারি : ১১০)।
ইসলামের ইতিহাসে দেখা যায় যে, অনেক সাহাবি, তাবেঈ ও বুজুর্গরা নবি করিম (সা.)কে স্বপ্নে দেখেছেন। ইমাম আবু হানিফা, আবদুর রহমান জামি, জালালুদ্দীন রুমি, শেখ সাদি, সাদুদ্দীন তাফতাজানি। হজরত শাহ ওলিউল্লাহ দেহলভি, আবদুল আজিজ, শায়খ জাকারিয়াসহ অসংখ্য নবি প্রেমিক তাকে স্বপ্নে দেখেছিলেন। বর্ণিত আছে, ইমাম মালেক (রহ.) অধিকাংশ রাতেই নবি করিম (সা.)কে স্বপ্নে দেখতেন।
শামায়েলে তিরমিজির বর্ণনায় নবি করিম (সা.)-এর আকার-আকৃতির বর্ণনা দেওয়া হয়েছে এভাবে-তিনি ছিলেন মানানসই দীর্ঘদেহী। তার গায়ের রং দুধে-আলতায় মিশ্রিত গোলাপের মতো। গোলগাল হালকা-পাতলা চেহারা। ঘন দাড়ি। মুখগহ্বর প্রশস্ত। ঘাড় যেন রৌপ্যপাত্রে রক্তঢালা। কেশরাশি সামান্য কোঁকড়ানো-বাবরি। মেদহীন সুঠাম দেহ। হাত-পায়ের আঙুলগুলো শক্তিশালী ও মজবুত। বাহু, কাঁধ ও বুকের ওপরে পশমবিশিষ্ট। অতিরিক্ত পশমমুক্ত শরীর। বুকে নাভি পর্যন্ত পশমের দীর্ঘ রেখা। দুই কাঁধের মাঝখানে মোহরে নবুওয়্যত। মাথা ও অস্থিবন্ধনীগুলো কিছুটা বড়োসড়ো। প্রশস্ত ললাট। চক্ষুগোলক ডাগর ডাগর। চোখের মণি কুচকুচে কালো। পাপড়ি লম্বাটে। ভ্রুযুগল অমিলিত প্রশস্ত ঘন। ভ্রুদ্বয়ের মাঝখানে প্রস্ফুটিত একটা রগ, যা রাগের সময় স্ফীত হতো। উন্নত চকচকে নাসিকা। দাঁতগুলো বিযুক্ত রুপার গাঁথুনি। এক কথায় তার অপূর্ব রূপমাধুর্য বর্ণনাতীত। যে কেউ তাকে প্রথম দর্শনে হতভম্ব হয়ে পড়ত। সে এ কথা বলতে বাধ্য-জীবনে এমন সুন্দর মানুষ দ্বিতীয়জন দেখিনি। ’
নবি করিম (সা.)কে স্বপ্নে দেখতে হলে করণীয় হলো-সত্যিকারের নবি প্রেমে মাতোয়ারা হওয়া, তার সুন্নতগুলো পালনের মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি পেতে উদ্গ্রীব হওয়া। তাহলেই কেবল নবি করিম (সা.)কে স্বপ্নে দেখা সম্ভব। কোনো কোনো আলেম বলেছেন, নবি করিম (সা.)কে স্বপ্নে দেখতে হলে, বেশি বেশি দরুদ পাঠ করা। ওজুসহকারে পবিত্র হয়ে বিছানায় শয়ন করা। শেষ রাতে উঠে তওবা করা।
এ ছাড়া আল্লামা শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (রহ.) তার তরগীবাতুস সাআদাত নামক কিতাবে লিখেন : জুমার রাতে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে। প্রতি রাকাতে ১১ বার আয়াতুল কুরছি ও ১১ বার করে সূরা ইখলাছ পাঠ করার পর সালাম ফিরিয়ে নিচের দরুদ শরিফ ১০০ বার পাঠ করতে হবে।
‘আল্লাহুম্মা সাল্লিআলা সাইয়্যিদিনা মুহাম্মাদানিন নাবিয়্যিল উম্মীয়্যি ওয়া আলা আলিহী ওয়াআসহাবিহী ওয়া সাল্লিম।’
জিয়াউল কুলুব কিতাবে উল্লেখ রয়েছে যে, দুরাকাত নামাজের প্রতি রাকাতে ২৫ বার সূরা এখলাছ ও ১০০০ বার সাল্লাল্লাহু আলা নাবিয়্যিল উম্মী পড়লে রাসূল (সা.)-এর দিদার নসিব হয়।