ডেস্ক রিপোর্ট :: যুক্তরাজ্যে এসাইলাম প্রার্থীদের জন্য আবাসন ঘাটতি বৃদ্ধি পাওয়ায় পুরুষ আশ্রয়প্রার্থীদের যেমন হোটেলে বাসস্থান দেওয়া হচ্ছে, তেমনি নারী আশ্রয়প্রার্থীকেও হোটেলে রাখছে হোম অফিস কর্তৃপক্ষ। বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ থেকে লন্ডনে যাওয়া অভিবাসীরা নানা ক্যাটাগরিতে এসাইলাম দাবি করেছেন সে দেশে।
সম্প্রতি দেশটিতে এসাইলাম আবেদনকারীদের সংখ্যা আগের চেয়ে অনেকগুণ বেড়ে যাওয়াতে আবাসন ঘাটতি মেটাতে হোটেলে রাখার কারণে নারী আশ্রয়প্রার্থীরা অমানবিক আচরণ ও যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন, এমনটি দাবি করেছে বৃটেন-ভিত্তিক সংগঠন উইমেন ফর রিফিউজি উইমেন (ডব্লিউআরডব্লিউ)।
দাতব্য সংস্থাটির একটি দল সাত নারী আশ্রয়প্রার্থীর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা। ”জবরদস্তি এবং নিয়ন্ত্রণ: হোটেলগুলোতে আশ্রয়প্রার্থী নারীদের প্রতি আচরণ” শিরোনামের প্রতিবেদনে সংগঠনটি বলছে, হোটেলগুলোতে নারী আশ্রয়প্রার্থীরা হোটেল কর্মীদের মাধ্যমে যৌন হয়রানি ও বিভিন্ন অমানবিক আচরণের শিকার হয়ে থাকেন। দাতব্য সংস্থাটির একটি দল সাত নারী আশ্রয়প্রার্থীর ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদনটির শিরোনাম, জবরদস্তি এবং নিয়ন্ত্রণ: হোটেলগুলোতে আশ্রয়প্রার্থী নারীদের প্রতি আচরণ। নারীর প্রতি সহিংসতার কারণে অনেক আশ্রয়প্রার্থী নিজ দেশ থেকে পালিয়ে এসেছেন। বৃটেনে তাদের যে হোটেলে রাখা হয়েছে সেখানেও তাদের সঙ্গে জবরদস্তিমূলক আচরণ ও তাদের নিয়ন্ত্রণ করা হয়, যা দুঃখজনক।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, হোটেলগুলোর জীবনযাত্রার চাপ নারীদের মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ‘অত্যন্ত ক্ষতিকর’ প্রভাব ফেলেছে। এ নিয়ে একটি জরিপ চালিয়েছে তারা। জরিপে অংশ নেওয়াদের ৯১ শতাংশ বিষণ্নতায় ভোগেন এবং ৭৫ শতাংশ হতাশাগ্রস্ত। সহিংসতা থেকে পালিয়ে আসা আশ্রয়প্রার্থী নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য লেবার পার্টির নেতৃত্বাধীন সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ডব্লিউআরডব্লিউ। বৃটিশ এই সংগঠন বলেছে, ‘‘হোটেলগুলোতে নারীদের প্রতি আচরণকে পাখির খাঁচার সাথে তুলনা করা যেতে পারে। খাঁচার পাখি যেমন যেখানে ইচ্ছা সেখানে উড়তে পারে না তেমনভাবে এখানেও নারীরা নিজের ইচ্ছামতো জীবনযাপন করতে পারেন না।’’
এসব বিষয় নারীদের আত্মসম্মান এবং মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর দীর্ঘস্থায়ী প্রভাব ফেলে। উইমেন ফর রিফিউজি উইমেন (ডব্লিউআরডব্লিউ) নেটওয়ার্কের সাতজন সদস্য এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন। তাদের মধ্যে তিনজনের হোটেলে থাকার অভিজ্ঞতা রয়েছে। তারা ২০২৪ সালের এপ্রিল থেকে জুলাইয়ের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে বসবাসরত নারীদের অভিজ্ঞতার ওপর একটি অনলাইন সমীক্ষা চালিয়ে এসব তথ্য সংগ্রহ করেন।
মোট ৬২ জন নারী শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থী জরিপে অংশগ্রহণ করেন। এর বাইরে তারা জুলাই মাসে ১০ জনের সরাসরি সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। ডব্লিউআরডব্লিউ’র প্রতিবেদন সম্পর্কে বৃটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, এগুলো গুরুতর অভিযোগ এবং আমরা জরুরি ভিত্তিতে এ ব্যাপারে তদন্ত করবো। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশ্রয় ব্যবস্থায় কর্মীদের মাধ্যমে অন্যায় বা অপরাধের অভিযোগকে খুব গুরুত্ব সহকারে নেয় ইনফোমাইগ্রেন্টস।
প্রতিবেদনে যেসব বিষয়গুলো উঠে এসেছে : নারীদের ওপর নিয়মিত নজরদারি ও পর্যবেক্ষণ। হোটেল কর্মীদের অবমাননাকর আচরণ। যেমন: যৌন হয়রানি, কক্ষে অনুপ্রবেশ এবং কেন্দ্র থেকে বের হতে বাধা প্রদান, শাস্তিমূলক পদক্ষেপের হুমকি, সহায়তা কার্যক্রম থেকে বিচ্ছিন্ন রাখা।
‘ডব্লিউআরডব্লিউ’ সংগঠনটি বৃটেনের সরকারকে এই পদক্ষেপ বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে।