নিজস্ব প্রতিবেদক :: সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জ উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নের গনিগঞ্জ তেহকিয়া-শিমুলবাক ইউনিয়নের শিমুলবাক গ্রাম পর্যন্ত ৯কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ২ কিলো ৫০মিটার মাটি ও আরসিসি ঢালাই রাস্তার কাজে ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করার অভিযোগ উঠেছে শিমুলবাক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহিনের বিরুদ্ধে। শান্তিগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশল (এলজিইডি) অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে উপজেলার পাথারিয়া ইউনিয়নের গনিগঞ্জ তেহকিয়া-শিমুলবাক ইউনিয়নের শিমুলবাক গ্রাম পর্যন্ত ৯ কোটি ৬৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ২ কিলো ৫০মিটার রাস্তার মাটি, প্রটেকশন ওয়াল ও আরসিসি ঢালাই রাস্তার কাজ পায় ভৈরবের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মেসার্স মমিনুল হক এম এ ওয়াহেদ জেবি। চুক্তি অনুযায়ী এই সড়কের কাজ চলতি বছরের নভেম্বর মাসের ১৯ তারিখ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন বাঁধা ও প্রতিকূল পরিবেশের কারণে সম্পন্ন করা যায়নি। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, পাথারিয়া ইউনিয়নের তেহকিয়া গ্রামের অংশে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের লোকজন কাজ করছেন। রাস্তার প্রটেকশন ওয়াল ও সিসি ব্লক নিমার্ণ করছেন। মাটির কাজ প্রায় ৮০ ভাগ শেষ করে এখন প্রটেকশন ওয়াল ও কালভার্ট নির্মাণ কাজে ব্যস্ত রয়েছেন শ্রমিকরা। পাথর ও বালি ওয়ার্ক অর্ডার অনুযায়ী ভালো মানের সামগ্রী ব্যবহার হচ্ছে কাজে। তেহকিয়া গ্রামের হাসান মিয়া, সোহান মিয়া, আব্দুল আহাদ ও সোহেল আহমদ জানান, আমাদের এলাকার এই কাজটি খুবই জনগুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় গ্রামের মানুষ মিলে ঠিকাদারের কাজকে তদারকি করে আসছি। তারা খুব ভালো ভাবে এই রাস্তার কাজ করে যাচ্ছেন। এই প্রকল্পে কোন অনিয়ম হচ্ছে না। প্রতিদিন আমরা এই কাজ তদারকি করছি। তারা আরো বলেন, শিমুলবাক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি শাহিনুর রহমান শাহিন এই কাজটি সম্পন্ন করতে দিচ্ছেন না। প্রতিদিন বাঁধা আপত্তি করছেন। তিনি নাকি এই প্রকল্পটি পাশ করাতে ১ কোটি টাকা খরচ করেছেন। তাই ঠিকাদারের লোকজনের কাছে তিনি ১ কোটি টাকা দাবি করছেন। আমরা এর প্রতিবাদ করলে তিনি কাজের সাইটে না এসে বিভিন্ন স্থানে থেকে বিভিন্ন অফিসারকে ফোন করে কাজ বন্ধ রাখার জন্য বলছেন।
গ্রামের আব্দস ছাত্তার, মনো মিয়া, দৌলত হোসেন, আব্দুল জাহান, আব্দুল মজিদ জানান, শাহিন চেয়ারম্যানের কারণে আমাদের এই সড়কটি নির্মাণ হতে বিলম্ভ হচ্ছে। তিনি প্রতি নিয়তই ঠিকাদারের লোকজনের সাথে অসধাচরণ করছেন। এখন তিনি প্রকাশেই ঠিকাদারের ম্যানেজারের কাছে ১ কোটি টাকা দাবি করেছেন। টাকা না দিলে কাজ করতে দিবেন না বলে হুমকি দিয়েছেন। চেয়ারম্যান শাহিন গ্রামের মানুষের সামনে ঠিকাদারের লোককে এই হুমকি দিয়েছেন ও ১ কোটি টাকা চাদা দাবি করেছেন।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার ইমরোল কায়েছ জানান, চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমান আমাকে গ্রামের মানুষের সামনে কাজ করা অবস্থায় হুমকি দিয়েছেন ১ কোটি টাকা না পেলে তিনি কাজ করতে দিবেন না বলে। আমাকে অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করেছেন তিনি। এই কাজটি মন্ত্রণালয় থেকে বিগত সরকার আমলে পাশ করিয়ে আনতে নাকি চেয়ারম্যান শাহিন ১ কোটি টাকা খরচ করেছেন। এখন এই কথা বলে আমাদের কাছে তিনি ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করছেন। তিনি প্রকল্প কাজের শুরু থেকেই বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে যাচ্ছেন। বার বার বাঁধা দিয়ে এই প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করতে দিচ্ছেন না।
ইউপি চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমান শাহিন জানান, আমি তাদের কাছে কোন চাঁদা দাবি করিনি। কাজ ভালো ভাবে হচ্ছে না বলে কাজ বন্ধ রাখার জন্য বলেছি। উপজেলা প্রকৌশলী ও জেলা নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে এ বিষয়ে অবগত করেছি। আমাকে না জানিয়ে কাজ চালু করায় আমি প্রতিবাদ করেছি মাত্র।
উপজেলা প্রকৌশলী সাজেদুল আলম জানান, প্রকল্পের কাজ ওয়ার্ড অর্ডার অনুযায়ী বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এখানে প্রতিদিন একজন ওয়ার্ক এসিস্টেন্ট’র মাধ্যমে কাজের গুণগত মান বজায় রেখে কাজ করা হয়। চেয়ারম্যান শাহিনুর রহমান আমার কাছে বেশ কয়েকবার কাজ বন্ধ রাখার কথা বলেছেন। আমরা শেখানে গিয়ে কাজে কোন অনিয়ম পাইনি। পরে কাজ শুরু করতে বলি। তিনি কাজ চালুকরার কারণে আমাকেও নানা কথা বলে গেছেন। ঠিকাদারের লোকজন আমাকে জানিয়েছেন, চেয়ারম্যান শাহিন তাদের কাছে ১ কোটি টাকা চাঁদা দাবি করেছেন। আমি কয়েকবার চেয়াম্যানের সাথে কথা বলেছি। কিন্তু তিনি আমার কথা শুনছেন না। তিনি পিডি স্যার ও জেলা নিবার্হী প্রকৌশলী মহোদয়ের কাছে এই কাজ বন্ধ রাখার জন্য বলেছেন। কিন্তু কেন? আমাদের কাজতো ভালো ভাবে নিয়ম মেনে নির্মাণ করা হচ্ছে। আমাদের কাজে অনিয়ম করার কোন সুযোগ নাই। কাজ চলাকালিন সময়ে প্রতিটি কাজ ল্যাবটেস্ট করা হয়।










