আজ, , ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সংবাদ শিরোনাম :





COPD কারণ, লক্ষণ রোগ নির্ণয়, এবং আমাদের করণীয় 

মনজুরুল মাআবুদ:

 

এম পি এইচ (হেলথ এন্ড নিউট্রেশন)

এসএমসি ব্লু স্টার স্বাস্থ্য  সেবা দানকারী

COPD একটি শ্বাসকষ্ট জনিত রোগ যা বিশ্বব্যাপী অসুস্থতা এবং মৃত্যুর একটি প্রধান কারণ। বহু লোক এই রোগে ভুগে এবং কম বয়সে এই রোগ অথবা এ রোগের  জটিলতায় মৃত্যুবরণ করে। বর্তমানে COPD বিশ্বব্যাপী মৃত্যুর অন্যতম  চতুর্থ কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, আগামী ২০২০ সাল নাগাদ সি ও পি ডি বিশ্বব্যাপী রোগের বিস্তৃতি  হিসেবে পঞ্চম এবং মৃত্যুর কারণ হিসেবে তৃতীয় স্থান দখল করবে।

 

সিওপিডি রোগ আমাদের দেশে একটি অন্যতম স্বাস্থ্য সমস্যা। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক এবং রোগী উভয়ের জন্য একটা চ্যালেঞ্জিং বিষয় এবং কখনো  হতাশা জনক ও বটে। কারণ বেশিরভাগ রোগী প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসকের কাছে আসেন না এবং রোগের সাময়িক উপশমের পর চিকিৎসকের উপদেশ মেনে চলেন না।

 

সিওপিডি হল ফুসফুসের  এমন একটি রোগ যেখানে শ্বাস-প্রশ্বাসে বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে রোগী শ্বাসকষ্টে ভুগে। এই শ্বাসকষ্ট দিন দিন বৃদ্ধি পায়,  যা আর কখনো সম্পূর্ণভাবে পূর্বের অবস্থায় ফিরে আসে না।

কাদের COPD বেশি হয় সিওপিডি রোগের জানা কারণ গুলোর মধ্যে ধূমপান হচ্ছে প্রধানতম | সাধারণত যে যত দীর্ঘ সময় ধূমপান করবে তার COPD হওয়ার সম্ভাবনা তত বেশি।

কর্মক্ষেত্রে জৈব এবং অজৈব ধূলিকণা বেশি হলে।

রান্নার কাজে জ্বালানি হিসেবে যারা  কাঠ,  শুকনো লাকড়ি ব্যবহার করেন।

বায়ু দূষণ বেশি হলে। ফুসফুসের সংক্রমণ হলে যেমন ঘন ঘন ভাইরাস সংক্রমণ।

যাদের আর্থসামাজিক অবস্থা নিম্ন এবং  যারা অপুষ্টিতে ভুগছে। সাধারণত নারীদের তুলনায় পুরুষরাই বেশি সিওপিডিতে আক্রান্ত হয়।

তা ছাড়া জন্মগতভাবে ফুসফুস ঠিকমতো গড়ে না উঠলে এবং আলফা ওয়ান এন্ট্রি ট্রিপসিন নামক এনজাইমের ঘাটতি হলেও সি ও পি ডি রোগ হতে পারে।

সিওপিডি রোগের লক্ষণ ও উপসর্গ শ্বাসকষ্ট ও কাশি সি ও পি ডি রোগের প্রধান লক্ষণ। শ্বাসকষ্ট সাধারণত কমবেশি সার্বক্ষণিক বিদ্যমান থাকে এবং চলাফেরায় বৃদ্ধি পায়। সঠিক চিকিৎসা না নিলে শ্বাসকষ্ট দিন দিন বাড়তে থাকে।

কাশির সাথে কফ থাকতে পারে এবং কোন কোন সময় শ্বাসকষ্ট, কাশি এবং  কফের পরিমাণ বেড়ে যেতে পারে। বেশিরভাগ রুগীর ক্ষেত্রে  ধূমপানের  বেশির ক্ষেত্রে ইতিহাস থাকে।

চিকিৎসা Treatment সাধারণত বেশিরভাগ সিওপিডি রুগী প্রাথমিক অবস্থায় চিকিৎসকের কাছে আসেন না। তাই কার্যকর চিকিৎসার জন্য দরকার রোগের তীব্রতা নির্ণয় এবং পর্যবেক্ষণ।

রোগের কারণসমূহ নির্ণয় এবং সম্ভব হলে কারণ সমুহ দূর করা। সিওপিডি রোগের সঠিক  ঔষধ ব্যবহার এবং রোগীদের সঠিক পুনবাসন COPDরোগ সম্পূর্ণ নিরাময় যোগ্য  নয়। কিন্তু সঠিক চিকিৎসায় রোগের লক্ষণ যেমন: শ্বাসকষ্ট ও কাশি ইত্যাদি অনেক কমে যায়,  রোগীর কার্যক্রমতা বৃদ্ধি পায়, রোগীর রোগ বৃদ্ধি এবং জটিলতা হ্রাস পায়।

COPD রোগীর চিকিৎসা সাধারণত ওষুধ দ্বারা এবং বিভিন্ন রকম পূর্ণবাসন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে করা হয়। রোগের তীব্রতা অনুযায়ী ঔষধ প্রয়োগ করা হয়। সাধারণত শ্বাসকষ্ট কমানোর জন্য বিভিন্ন রকম ইনহেলার ব্যবহার করা হয়। যেমন সালবিউটামল, ইপ্রাট্রপিয়াম,বকটি কু স্টেরয়েড   ইত্যাদি। জীবাণু সংক্রমণ ঘটলে এন্টিবায়োটিক প্রয়োজন হতে পারে। রোগের তীব্রতা বেশি হলে রোগীকে অনেক সময় দীর্ঘমেয়াদি অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন হয়। এছাড়া রোগীকে  ইনফ্লুয়েঞ্জ এবং  নিউমোনিয়া রোগের ভ্যাকসিন দেওয়া হলে ঘন ঘন  রোগ বৃদ্ধি এবং জটিলতা অনেকাংশ কমে যায়।

সিওপিডি রোগ যেহেতু দীর্ঘ মেয়াদি এবং সম্পূর্ণ নিরাময় যোগ্য নয়, তাই সিওপিডি রোগীদের সামাজিক স্বাভাবিক জীবন যাপনের জন্য  পূর্ণবাসন প্রক্রিয়া চিকিৎসার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই প্রক্রিয়ার প্রথম পর্যায়ে হল রোগীকে তার রোগ, রোগের কারণ এবং তার  পরিণতি  সম্পর্কে সম্যক ধারণা দেওয়া। রোগবৃদ্ধির কোন সমূহ অবহিত করা এবং কখন চিকিৎসকের সাথে সাক্ষাৎ করবেন সে ব্যাপারে  সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া। ধুমপায়িদের ক্ষেত্রে ধূমপান বর্জনের সাহায্য করা পূর্ণবাসন প্রক্রিয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

পরবর্তী পর্যায়ে বিভিন্ন রকম ব্যায়াম,  যেমন নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত হাটা, শ্বাস-প্রশ্বাসে বিভিন্ন ব্যায়ামের মাধ্যমে রোগীর কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি করা। ব্যায়ামের সাথে সাথে  পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ জরুরি। কারণ COPD রোগীরা সাধারণত অপুষ্টিতে ভুগে এবং তাদের  বিএমআই রোগ কম থাকে।

COPDরোগীদের নির্দিষ্ট সময় অন্তর   চিকিৎসকের কাছে ফলোআপ করা প্রয়োজন। এতে রোগীর শারীরিক উন্নতি বা অবনতি দ্রুত সনাক্ত করা যাবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ সহজ হয়।

এখানে ক্লিক করে শেয়ার করুণ