নিজস্ব প্রতিবেদক :: সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার পৌরসভার জেলরোড মার্কেটের শেষ প্রান্তে ভাসমান এক টং দোকান ভাঙার ঘটনায় ক্ষোভ ও নিন্দার ঝড় উঠেছে স্থানীয় ব্যবসায়ী ও এলাকাবাসীর মধ্যে। অভিযোগ উঠেছে, জেলা প্রশাসকের নির্দেশে বলপ্রয়োগ করে দোকান ভেঙে নিরীহ ব্যবসায়ীকে পথে বসানো হয়েছে, যা স্থানীয়ভাবে মানবিকতা বিরোধী পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। সূত্রে জানা যায়, জেলরোড মার্কেটের সর্বশেষ দোকানকোটার উত্তরে পৌরসভার একটি পরিত্যক্ত ড্রেনের ওপর ভাসমান চা-পানের টং দোকান বসিয়ে প্রায় চার বছর ধরে ব্যবসা করছিলেন শহরতলীর সুরমা ইউনিয়নের ইব্রাহিমপুর গ্রামের মখলিছ মিয়ার ছেলে মো. অহিদুর রহমান বাচ্চু। মাত্র ৫ ফুট প্রস্থ ও ১০ ফুট দৈর্ঘ্যের ওই দোকান থেকেই তিনি পরিবারের জীবিকা নির্বাহ করতেন। দোকানটি ড্রেনের ওপর স্থাপন হলেও চলাচলে বা পরিবেশে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছিল না বলে স্থানীয়রা জানান। অভিযোগ রয়েছে, মার্কেটের একটি দোকানকোটার মালিক নান্টু পালের স্বার্থ রক্ষায় এবং একদল পোষ্য ব্যক্তি ও স্থানীয় প্রভাবশালীর চাপে প্রশাসন এই উচ্ছেদ অভিযান চালায়। মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর) অহিদুর রহমান বাচ্চু চা-পানের দোকান চালু রাখার অনুমতি চেয়ে জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন করেছিলেন। কিন্তু মাত্র পাঁচ ঘণ্টা পরেই, বুধবার (৫ অক্টোবর) বিকেল ৫টায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতিতে দোকানটি ভেঙে ফেলা হয়।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী বাচ্চুর দাবি, “দোকানটি স্টিলবডি ও এঙ্গেল দিয়ে তৈরি ছিল, যা সহজেই সরানো সম্ভব ছিল। কিন্তু প্রশাসন গ্রিল মেশিন দিয়ে কেটে একেবারে ধ্বংস করে দিয়েছে। এতে আমার প্রায় দুই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।” তিনি আরও বলেন, “কোনো নোটিশ না দিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে আমার জীবিকা কেড়ে নেওয়া হয়েছে। এখন পরিবার নিয়ে পথে বসেছি।”
অন্যদিকে, সুনামগঞ্জ পৌরসভার প্রশাসক ও স্থানীয় সরকার বিভাগের ভারপ্রাপ্ত উপপরিচালক মো. মতিউর রহমান খান বলেন, “অবৈধ স্থাপনা সরাতে আগেই নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নির্দেশ অমান্য করায় জেলা প্রশাসকের নির্দেশে উচ্ছেদ করা হয়।” তবে বাজারের ব্যবসায়ী ও স্থানীয় বাসিন্দারা অভিযোগ করেন, জেলা প্রশাসকের বাসভবন সংলগ্ন এলাকাতেই শতাধিক ভাসমান দোকান চলছে, যেখানে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। অথচ অহিদুর রহমান বাচ্চুর দোকানটি, যা চলাচলে কোনো প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছিল না, তা ভেঙে ফেলা হয়েছে রহস্যজনকভাবে। সুনামগঞ্জ জেলা স্কাউটসের সেক্রেটারি মো. নজরুল ইসলাম বলেন, “ওই দোকানটি আমাদের কোনো অসুবিধা সৃষ্টি করেনি, বরং সুবিধাই ছিল। আমরা কোনো অভিযোগ করিনি।” স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা এ ঘটনাকে ‘মানবিকতার অবমাননা’ বলে আখ্যায়িত করে বলেন, “এটি ছিল প্রশাসনের অতি উৎসাহী ও আক্রোশমূলক সিদ্ধান্ত।” এদিকে সামাজিক মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে ইতিমধ্যেই তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলছেন, “এক কাপ চা’ই ছিল তার জীবিকার আশ্রয়- সেটুকু নিয়েও এখনো শান্তি নেই।”










