সূত্র জানায়, এই বক্তব্য দিতে গিয়ে তারেক রহমান আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। এ সময় উপস্থিত মনোনয়ন প্রত্যাশীরাও চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আদালতের একটি ঘটনাকে উদাহরণ টেনে বলেন, ‘এক সন্তানকে নিয়ে দুই মায়ের দাবি ছিল। বিচারক তখন বললেন সন্তান যখন আপনাদের দুজনেরই, কেউ কারও দাবী মানবেন না, তাহলে আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমি আপনাদের সন্তানকে দুই ভাগে ভাগ করে দুই মাকে দিয়ে দিব। তখন যিনি আসল মা সে বললেন, না। সন্তানকে ভাগ করার দরকার নেই উনাকেই (অন্য আরেক দাবিদার) দিয়ে দেন। কিন্তু যতদিন বেঁচে থাকি আমার সন্তানকে আমি দূর থেকে দেখবো। অর্থাৎ আসল মা-ই সে যিনি সন্তানকে ভাগ হতে দেন নি। ঠিক এই ভূমিকাটা আমি আপনাদের (মনোনয়নপ্রত্যাশী) কাছ থেকে চাই। প্রার্থীরা যদি সেই ভূমিকা অর্জন করেন তাহলে আপনাদের নেতৃত্বেই এগিয়ে যাবে বিএনপি। একজন প্রার্থীকে সবাই সম্মানের সঙ্গে গ্রহণ করব।’ রাত ৮টা থেকে শুরু হয়ে মতবিনিময় সভা চলে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত। সবাই বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বক্তব্য দেন। ঢাকা বিভাগের মতবিনিময় সবাই উপস্থিত ছিলেন মুন্সিগঞ্জ-২ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী বিএনপির কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ। তিনি জানান, ‘ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের বক্তব্য ছিল অসাধারণ। তার বক্তব্যের পুরোটা সময় শুনশান নীরবতা ছিল। আমিসহ উপস্থিত সবাই চোখের পানি ধরে রাখতে পারিনি। তার মা, পরিবারসহ যে বক্তব্য দিয়েছেন সত্যিই চোখে পানি ধরে রাখার মত ছিল না। আমরা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আশ্বস্ত করেছি, নির্বাচন সামনে রেখে সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকবো। এবং তার নির্দেশে সবাই এক হয়ে কাজ করব।’ তিনি বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সকলকে ঐক্যবদ্ধ থাকার কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, বিগত বছরগুলোতে দলের সবাই অনেক ত্যাগ শিকার করেছেন, তাদের মূল্যায়ন করবে দল। তবে, দলের স্বার্থে নিজেদের মধ্যে ঐক্য ধরে রাখতে হবে। দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই সকলকে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন।’ দলের সম্ভাব্য প্রার্থীদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকের অংশ হিসেবে এদিন পৃথকভাবে সিলেট, খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল ও ঢাকা বিভাগের জেলার মনোনয়নপ্রত্যাশী নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন তারেক রহমান। বিকাল থেকে রাত পর্যন্ত দলের চেয়ারপারসনের গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আলাদাভাবে পাঁচ বিভাগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।
পাঁচ বিভাগের ৯ জন মনোনয়রপ্রত্যাশীর সঙ্গে কথা হয়েছে। তারা জানিয়েছেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে যে ষড়যন্ত্র চলছে, এই পরিস্থিতিতে ভুল ত্রুটি না করার জন্য নেতাদের বিভিন্ন নির্দেশনা দিয়েছেন তারেক রহমান। ঐক্যবদ্ধভাবে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানোরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। ধানের শীষের পক্ষে সব নেতাকে কাজ করার নির্দেশনাও দেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। ওদিকেযারা মনোনয়ন পাবেন তাদেরকে আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণ থেকে থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ঐক্যবদ্ধ থেকে ষড়যন্ত্র মোকাবিলায় নির্দেশনা দেন তিনি।
সভায় উপস্থিত সিলেট ও খুলনা বিভাগের সাতজন মনোনয়নপ্রত্যাশী জানিয়েছেন, ‘সভায় তারেক রহমান নেতাদের ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে দলের স্বার্থে দল মনোনীত প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। বলেন, মনোনয়ন পাওয়ার পরে কোন মিছিল, মিষ্টি বিতরণ, ফুল বিতরণ করা যাবে না। এগুলো করলে দলের ঐক্য বিনষ্ট হবে।’
খুলনা-৪ আসনে মনোনয়নপ্রত্যাশী পারভেজ মল্লিক বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নেতাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দিয়েছেন। আর যে ষড়যন্ত্র চলছে, এরজন্য সবাইকে সজাগ ও সতর্ক থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।’ এর আগে গত রোববার রংপুর, চট্রগ্রাম, কুমিল্লা, ময়মনসিংহ ও ফরিদুপরের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা করেছেন তারেক রহমান।
রাজশাহী বিভাগীয় বিএনপির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান আলীম বলেন, ‘সভায় দেশ, জাতি, স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষার জন্য আমাদের ঐক্যবদ্ধ থাকার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করতে হবে। মনোনয়ন যে নেতাকেই দেয়া হোক না কেনো, ধানের শীষকে জেতাতে হবে। যে দলের জন্য আমরা দীর্ঘ ১৭ বছর কষ্ট এবং ত্যাগ স্বীকার করেছি। ধানের শীষের বিজয় নিশ্চিতে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে।’ বরিশাল-৫ আসনের মনোনয়নপ্রত্যাশী আবু নাসের মুহাম্মদ রহমাতুল্লাহ বলেন, ‘বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশ ও দলের স্বার্থে ঐক্য ধরে রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন। আর যাকেই মনোনয়ন দেয়া হবে তার পক্ষেই ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি।’










