আল হেলাল, সুনামগঞ্জ :: সুনামগঞ্জের ধোপাজান চলতি নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধের দাবি জানিয়ে শিক্ষক,শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী মানববন্ধন করেছে। সোমবার (১৩ অক্টোবর) দুপুরে জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের পিয়ারপুল এলাকার বেড়িবাঁধের ওপর ‘এসো কাজ করি’ নামের একটি সামাজিক সংগঠনের ব্যানারে উক্ত মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন করা হয়। এতে বক্তারা জানান, ইজারাবিহীন ধোপাজান চলতি নদীতে বালু উত্তোলন সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। ইজারা না থাকলেও ড্রেজার ব্যবহার করে নদী থেকে অবাধে বালু তোলা হচ্ছে। এতে বেড়িবাঁধের স্থায়িত্বহানি এবং স্কুল-কলেজ, জনবসতি ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। মানববন্ধনে বক্তব্য দেন স্থানীয় রতারগাঁও উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজের অধ্যক্ষ মুহসীন আহমদ,শিক্ষক হাবিবুর রহমান, আবদুল হালিম, আবুল মনসুর ও শিক্ষার্থী নাঈম আহমদ এবং আশরাফুল ইসলাম। প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ধোপাজান নদী সদর ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সুরমা নদীতে মিশেছে। ২০১৮ সাল থেকে এই নদীর বালি মহাল ইজারা বন্ধ রয়েছে। গত ৬ বছর যারা বালি লুটতরাজে সক্রিয় ছিল ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর থেকে নদীতে সেই চক্রটিই প্রকাশ্যে বালু উত্তোলন শুরু করেছে। এর মধ্যে ‘লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং’ নামে একটি প্রতিষ্ঠানকে ১ কোটি ২১ লাখ ঘনফুট বালু উত্তোলনের অনুমতি দিয়েছে বিআইডবিøউটিএ। প্রতিষ্ঠানটি সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের কাজে বালু ব্যবহার করবে। পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী ও স্থানীয়রা জানান, অনুমোদিত ভিট বালু উত্তোলন ছাড়াও নদী হতে অবৈধভাবে খনিজ বালু উত্তোলন অব্যাহত রয়েছে। বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা) ১৭ সেপ্টেম্বর এই বিষয়ে চারটি মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ ১৭ জনকে চিঠি পাঠিয়ে নদী থেকে বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধ ও অনুমতি বাতিলের দাবি জানিয়েছে। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে, এ সিদ্ধান্ত দেশের আইনের স্পষ্ট লঙ্ঘন এবং আদালত অবমাননার সমান। তারপরও বন্ধ হচ্ছেনা বেপরোয়া বালি উত্তোলন। এছাড়া ‘লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং ভিটবালি উত্তোলনের অনুমতি পেলেও বাস্তবে দেখা যায় বালিচোরদের চিহ্নিত সিন্ডিকেট গত এক সপ্তাহ ধরে ড্রেজার মেশিনের সাহায্যে খনিজ বালি উত্তোলন করে যাচ্ছে। এলাকার লোকজন জেলা প্রশাসক,জেলা পুলিশ সুপার,সদর মডেল থানার ওসি,নৌপুলিশ টুকেরঘাট ফাড়ি,সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ সংশ্লিষ্ট সকল আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে জানানোর পরও বন্ধ হচ্ছেনা বালি পাথর লুটতরাজ। আওয়ামী লীগ আমলে তালিকাভূক্ত যেসব চোরাকারবারীরা এসব বালিপাথর লুটতরাজ করতো এখন খোলস পাল্টিয়ে বিএনপি সেজে তারাই নতুন উদ্যোমে বালিপাথর লুটতরাজে লিপ্ত হয়েছে। অন্যদিকে মইনপুর গ্রামের ক্রাশার মেশিন মালিকেরা রাতের আধারে ডলুরা গ্রামের সামনে ধোপাজান চলতি নদী হতে লুটতরাজ করছে পাথর। বিজিবির স্থানীয় নারায়নতলা ও ডলুরা ক্যাম্পের সামনে দিয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে সরকারের মূল্যবান খনিজ সম্পদ এমনিভাবে লুটতরাজ করা হলেও আইন প্রয়োগকারী সংস্থা নিরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক ড.মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া বলেন,আপনারা সাংবাদিকরা লেখালেখি করেন। আমরা অসহায়। এত এত পত্র লেখালেখি করছি তারপরও মন্ত্রণালয় থেকে কারা কিভাবে আদেশ নিয়ে আসে জানিনা। লিমপিড ইঞ্জিনিয়ারিং বিআইডাবিøউটিএর সাথে ভিট বালি উত্তোলনের জন্য আদেশ পেয়ে খনিজ বালি উত্তোলন করছে কিভাবে জানতে চাইলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। সুনামগঞ্জ সদর থানা ওসি আবুল কালাম বলেন,ভিট বালির পরিবর্তে কেউ যদি খনিজ বালি উত্তোলন করে সেটা দেখবে জেলা প্রশাসন। এখানে পুলিশ প্রশাসনের করার কিছু নেই। ইব্রাহিমপুর গ্রামবাসী বলেন,জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনকে ম্যানেজ করে স্থানীয় মুসলিমপুর,বালাকান্দা ও হুরারকান্দা গ্রামের ৩০/৩৫ জনের একটি চিহ্নিত চোরাকারবারী সিন্ডিকেট ইজারাবিহিন ধোপাজান চলতি নদীর খনিজ সম্পদ লুটতরাজ করে যাচ্ছে। হুরারকান্দা গ্রামের পাশে নদীতে টহল দায়িত্বে থাকা পুলিশ ফোর্স বালি লুটতরাজকারীদের গ্রেফতার না করে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ আন্দোলনের কর্মী ও বিএনপি নেতা ফেরদৌস আহমদ বলেন,শুভংকরের ফাকি ও রাষ্ট্রীয় জালিয়াতি প্রতারনা চলছে ধোপাজান চলতি নদীর বালি পাথর লুটতরাজে। তিনি বলেন,ধোপাজান চলতি নদী বিআইডাবিøউটি এর আওতাভূক্ত নহে। সুতরাং এ নদীর ভিটবালি উত্তোলনের অনুমতি তারা দিতে পারেনা। আর জেনে শুনে প্রশাসন তা এলাউ করতে পারেনা। কিন্তু সকলকে ম্যানেজ করেই প্রকাশ্য দিবালোকে রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটতরাজের মহোৎসব চালানো হচ্ছে ধোপাজান চলতি নদীতে। এ ব্যাপারে খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্ঠা ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কঠোর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন উত্তর সুরমাবাসী।


ধোপাজান চলতি নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন বন্ধে মানববন্ধন
১৪ অক্টোবর ২০২৫, ৪:৫৪ পূর্বাহ্ন|
পোস্টটি ১২১১ বার পড়া হয়েছে








