আজ, , ৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ

সংবাদ শিরোনাম :





কওমীর উলামাদের রাজাকারীর দায় নেওয়ার তো কোন কারণ নেই

সৈয়দ মবনু

 

কওমীর হুজুররা কেন নিজেরা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে রাজাকারীর দায় নিজেদের মাথায় নিবেন যেখানে একাত্তরে ওলপাকিস্তান জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা ও কওমীর আলেম মুফতি মাহমুদ (র.) বাংলাদেশের মজলুম মানুষের পক্ষে কথা বলেছেন এবং স্পষ্ট ফতোয়া দিয়েছেন; ‘শেখ মুজিব এবং বাঙালী সুন্নি মুসলিম, ইয়াহিয়া-ভূট্টো শিয়া। প্রত্যেক সুন্নির জন্য ওয়াজিব প্রত্যেক সুন্নির জান-মালের হেফাজত করা।’ জমিয়ত নেতা মুফতি মাহমুদ যখন ঘোষণা করলেন তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে বৈঠক করতে বাংলায় আসবেন তখন ভূট্টো বললো ওয়ানওয়ে টিকেট করে আসতে। যদি তিনি বা যারা আসবে তাদের কেউ ফিরে যান তবে তার পা ভেঙে দেওয়া হবে। মুফতি মাহমুদ সেদিন গর্জে উঠে বলেছিলেন; ‘পাকিস্তান কারো বাপের জমিদারী নয়।’ অনেকেই হয়তো জানেন না সেই সময় পেশওয়ারে মওদুদীর জামায়াতে ইসলামী আর ভূট্টোর পিপলস পার্টি মিলে জমিয়তের অফিসে আগুন দিয়েছিলো। তবে সেই সময়ও ভূট্টো নির্বাচনে মুফতি মাহমুদের কাছে পরাজিত হয়েছিলো। মুফতি মাহমুদ (র.) এর ছেলে মুফতি ফজলুর রহমান আজও পাকিস্তান জমিয়তের প্রধান এবং রাজনীতিতে জামায়াত থেকে বেশি প্রভাব বিস্তারকারী। ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী হয়ে মুফতি ফজলুর রহমানকে চ্যালেঞ্জ করে ক্ষমতায় থাকতে পারেনি, এটাই বাস্তবতা। বাংলাদেশের জমিয়ত ভালো ও কর্মট নেতা পেলে আজও পাকিস্তান থেকে কম শক্তিশালী নয়। এই শক্তিকে প্রত্যেক স্বৈরাচারই ভয় করে। একাত্তরে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ এবং দারুল উলূম দেওবন্দ ছিলো মজলুম বাঙালিদের পক্ষে। ফেদা-এ মিল্লাত সৈয়দ আসআদ আল মাদানী (র.) নিজে দারুল উলূম দেওবন্দের ইফতা বিভাগ থেকে ফতোয়া নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন মুসলিম নেতাদের কাছে প্রেরণ করেন বাঙালীদেরকে সহযোগিতার জন্য। তৎকালিন বাংলাদেশে গ্রাম-গঞ্জে যোগাযোগের ঘাটতিতে বা কৌশলগত কারণে কওমীর দু-চারজন পাকিস্তানের পক্ষে থাকলেও কওমীর বেশিরভাগ আলেম, বিশেষ করে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের নেতা-কর্মীরা জালেম পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ছিলেন। হযরত হাফেজ্জী হুজুর, মাওলানা আব্দুল করিম শায়খে কৌড়িয়া, শায়খুল হাদিস আজিজুল হক, মাওলানা শামসুদ্দিন কাসেমী, মাওলানা এমদাদুল হক আড়াইহাজারী, শায়খুল হাদিস মাওলানা খলিলুর রহমান বর্ণভী, দরগাহের ইমাম সাহেব প্রমূখ কওমী বুজুর্গদের কমবেশি অবদান রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে। জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম ও কওমীর আলেমরা বুক ফুলিয়ে বলতে পারেন; আমরা ১৯৪৭ খ্রিস্টাব্দের পূর্ব পর্যন্ত ভারতবর্ষের স্বাধীনতার পক্ষে যেমন ছিলাম তেমনি ১৯৪৭-এ পাকিস্তান স্বাধীনের পক্ষে ভূমিকা রেখেছি। আবার একাত্তরেও আমরা বাংলার মজলুমদের পক্ষে- মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলাম। আজও আমরা জালেম-মজলুমের লড়াইতে মজলুমের পক্ষে আছি। জমিয়ত এবং কওমীর আলেমরা বুক ফুলিয়ে বলতে পারেন একাত্তরের স্বাধীনতার লড়াইয়ে কম-বেশি আমাদের আকাবির-আসলাফের অবদান রয়েছে। আজকে জমিয়তের যিনি কেন্দ্রীয় সভাপতি তাঁর বাবা মাওলানা শফিক সাহেব আকুনী (র.) এর অবদানতো অবশ্যই রয়েছে। জমিয়তের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব মাওলানা বাহাউদ্দীন জাকারিয়ার পিতা মাওলানা শামসুদ্দিন কাসেমী (র.) ছয় দফার পক্ষে সেই সময় আন্দোলন করে জেলেও গিয়েছেন।
তখন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি ছিলেন পীর মুহসিন উদ্দিন দুদু মিয়া, যিনি বৃটিশ বিরোধী ফারায়েজী আন্দোলনের নেতা হাজী শরিয়তুল্লাহের পঞ্চমপুরুষ। তিনি প্রকাশ্য ঘোষণা দিয়ে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে এসেছিলেন। তিনি ১৯৬৯ খ্রিস্টাব্দ থেকে ১৯৭১খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সভাপতি ছিলেন। সেই সময় জমিয়তের সহসভাপতি ছিলেন হাফেজ মাওলানা আব্দুল করিম শায়খে কৌড়িয়া (র.) এবং সাধারণ সম্পাদক মাওলানা শামসুদ্দিন কাসেমী (র.)।

বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নেতা মামুনুল হকের বাবা শায়খুল হাদিস আল্লামা আজিজুল হকও মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে ছিলেন, তিনিও এক সময় জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের সভাপতি ছিলেন। মাওলানা মামুনুল হক নিজেও তার বক্তব্যে স্পষ্ট বলেছেন, আকিদা ও মুক্তিযুদ্ধের ব্যাপারে কোন আপোষ নেই। (ইউটিউবে আছে)।

নতুন প্রজন্মের কওমীর উলামাদের পড়া প্রয়োজন শাকের হোসাইন শিবলীর -আলেম মুক্তিযোদ্ধার খোঁজে। সৈয়দ মবনু’র ১. দ্রাবিড় বাংলার রাজনীতি, ২. মুক্তিযুদ্ধ ও উলামায়ে কেরাম, ৩. সহবতে উলামা। এবং মুসা আল হাফিজের; মুক্তিযুদ্ধ ও জমিয়ত।

এখানে ক্লিক করে শেয়ার করুণ